Home বাংলাদেশ রাজনীতি বিএনপি চায় সরকারের স্পষ্ট অবস্থান

বিএনপি চায় সরকারের স্পষ্ট অবস্থান

Posted by on in বাংলাদেশ 0
1st Image

বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বিশেষ করে বিএনপি সরকারকে চাপ দিচ্ছে যাতে নির্বাচন এবং সংশ্লিষ্ট সংস্কার প্রক্রিয়ার বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট অবস্থান প্রকাশ করা হয়। দলটির নেতারা মনে করেন, জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য সরকারকে দ্রুত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বিএনপি বরাবরই নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় সংস্কারের পক্ষে। তবে তারা চায় না যে, সংস্কারের অজুহাতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হোক। দলটির নেতাদের মতে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আগে উপযুক্ত সংস্কার কার্যকর করতে হবে, তারপরই নির্বাচন হওয়া উচিত।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজের বিষয়ে ঐকমত্য হয়, তাহলে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে। তবে বৃহত্তর সংস্কার প্যাকেজ গ্রহণ করা হলে তা বাস্তবায়নের জন্য ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। বিএনপির মতে, সংস্কার নিয়ে সময়ক্ষেপণ না করে যত দ্রুত সম্ভব তা বাস্তবায়ন করা উচিত।

সম্প্রতি ঢাকায় জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসের উদ্যোগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করেন, এই আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি করতে পারে।

বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলেছেন, তারা সংস্কারের বিরুদ্ধে নয়। বরং সংস্কারের নামে যদি কোনো পক্ষ রাজনৈতিক সুবিধা নেয়, তাহলে তা মেনে নেওয়া হবে না। তাদের মতে, জাতিসংঘ মহাসচিবের উপস্থিতি এই বিষয়ে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াবে। তবে সরকার যদি তার অবস্থান স্পষ্ট না করে, তাহলে এই আলোচনার বিশেষ কোনো ফলাফল আসবে না।

সরকার বর্তমানে বিভিন্ন কমিশনের মাধ্যমে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে বিএনপি মনে করে, সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রকাশ করা জরুরি। জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনা শেষে বিএনপি নেতারা বলেছেন, নির্বাচন এবং সংস্কার—উভয় বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা দরকার। বিএনপি মনে করে, নির্বাচন কেন্দ্রীক সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠকের পর বলেন, "আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি যে, নির্বাচন-সংক্রান্ত সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।" তিনি আরও বলেন, "সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাই প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে অবিলম্বে একটি নির্ধারিত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা উচিত।"

বিএনপির মতে, জাতীয় নির্বাচন আরও বিলম্বিত হলে দেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট আরও গভীর হবে। তারা মনে করে, নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নেই এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে অবিলম্বে নির্বাচন করা প্রয়োজন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, "অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেরাই বিভ্রান্তি তৈরি করছে। তারা এখনো নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করেনি, যা জনগণের মনে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। সরকার যদি নির্বাচন বিলম্বিত করে, তাহলে তা দেশের জন্য ক্ষতিকর হবে।"

বিএনপি নেতারা মনে করেন, সরকার নিজেদের মধ্যে সমন্বয়হীনতায় ভুগছে। তাই দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচনের নির্ধারিত তারিখ ঘোষণা করাই উত্তম হবে। জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা হলো তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। তাই এই প্রক্রিয়া বিলম্বিত না করে, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা উচিত।