বাংলাদেশের আবহাওয়া সাধারণত উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর অন্তর্গত, যেখানে সারা বছর গ্রীষ্ম, বর্ষা এবং শীত—এই তিনটি প্রধান ঋতু পরিলক্ষিত হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাপমাত্রার পরিবর্তন এবং চরম আবহাওয়া পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হতে পারে। চলুন, সারা বছরের তাপমাত্রা এবং দেশের সবচেয়ে গরম ও শীতল স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
সারা বছরের তাপমাত্রা
বাংলাদেশে গ্রীষ্মকাল (মার্চ-জুন) সাধারণত গরম ও শুষ্ক হয়, বর্ষাকাল (জুন-সেপ্টেম্বর) প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়, এবং শীতকাল (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা হয়। নিচের টেবিলে বাংলাদেশের প্রধান অঞ্চলগুলোর গড় তাপমাত্রা দেওয়া হলো:
অঞ্চল | গ্রীষ্মকাল (°C) | শীতকাল (°C) | বার্ষিক গড় (°C) |
---|---|---|---|
ঢাকা | ৩০-৩৬ | ১২-১৮ | ২৫-২৭ |
চট্টগ্রাম | ২৮-৩৪ | ১৫-২০ | ২৬-২৮ |
খুলনা | ৩২-৩৮ | ১৩-১৯ | ২৭-২৯ |
রাজশাহী | ৩৫-৪১ | ৮-১৪ | ২৬-৩০ |
সিলেট | ২৯-৩৫ | ১০-১৬ | ২৫-২৭ |
রংপুর | ৩১-৩৭ | ৬-১৩ | ২৪-২৬ |
বরিশাল | ৩২-৩৭ | ১২-১৭ | ২৬-২৮ |
বাংলাদেশের সবচেয়ে গরম স্থান
বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল, বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা, যশোর, রাজশাহী, পাবনা ও খুলনা জেলায় গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি হয়। ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ৩৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল
তাপমাত্রার তুলনামূলক চার্ট:
শহর | সর্বোচ্চ তাপমাত্রা (°C) | গ্রীষ্মের গড় তাপমাত্রা (°C) |
---|---|---|
চুয়াডাঙ্গা | ৪৩.৭ | ৩৭-৪০ |
রাজশাহী | ৪৫.১ | ৩৮-৪১ |
যশোর | ৪২.৬ | ৩৬-৩৯ |
পাবনা | ৪৩.০ | ৩৭-৪০ |
খুলনা | ৪১.২ | ৩৫-৩৮ |
বাংলাদেশের সবচেয়ে শীতল স্থান
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, বিশেষ করে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম জেলায় শীতকালে তাপমাত্রা অত্যন্ত কমে যায়। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল, যা দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।
শীতের সময় সর্বনিম্ন তাপমাত্রার তুলনামূলক চার্ট:
শহর | সর্বনিম্ন তাপমাত্রা (°C) | শীতের গড় তাপমাত্রা (°C) |
---|---|---|
তেঁতুলিয়া | ২.৬ | ৫-১০ |
দিনাজপুর | ৫.১ | ৭-১২ |
রংপুর | ৬.৩ | ৮-১৩ |
সৈয়দপুর | ৫.৫ | ৭-১২ |
কুড়িগ্রাম | ৪.৫ | ৬-১১ |
বাংলাদেশের আবহাওয়া অঞ্চলভেদে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। পশ্চিমাঞ্চলে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি হয়, বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা ও রাজশাহী জেলায়। অন্যদিকে, উত্তরাঞ্চলে শীতকালে তাপমাত্রা অত্যন্ত কমে যায়, বিশেষ করে পঞ্চগড় ও রংপুর জেলায়। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীরা যদি দেশে ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন, তবে আবহাওয়ার এই ভিন্নতা মাথায় রেখে সময় নির্বাচন করা উচিত। গ্রীষ্মকালে ভ্রমণ করলে উত্তপ্ত আবহাওয়ার সম্মুখীন হতে হতে পারে, আর শীতকালে ভ্রমণ করলে উত্তরের জেলাগুলোতে শীতের তীব্রতা অনুভব করা যেতে পারে।
পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার এই চরমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা কৃষি, স্বাস্থ্য এবং জনজীবনে প্রভাব ফেলছে। তাই আবহাওয়া সম্পর্কে সঠিক ধারণা এবং পূর্বাভাস জানা সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।