ঈদের মাঝেই ঢাকায় ইসরাইলি দুটি বিমানের অবতরণ
বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ যখন ঈদের ছুটিতে তাদের প্রিয়জনের সাথে পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছিলো, এমন সময় একটি অভূতপূর্ব এবং গোপনীয় ঘটনা ঘটে যায় দেশের বুকে। প্রথমবারের মতো ইসরায়েলি দুটি কার্গো বোয়িং ৭৪৭-৪০০ বিসিএফ বিমান তেল আবিবের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। মানবজমিন পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দুটি ফ্লাইটই সরাসরি তেলআবিব থেকে ঢাকায় এসেছিল।
ইসরায়েলের তেল আবিব থেকে যে ফ্লাইটটি এসেছিল, সেটি অপারেট করেছে ন্যাশনাল এয়ারলাইন্স। বোয়িং ৭৪৭ -৪০০ মডেলের উড়োজাহাজটি তেল আবিব থেকে প্রায় ৬ ঘণ্টায় উড়ে ঢাকায় আসে। গাজায় গণহত্যাকারী মানবতার দুশমন ইসরাইলের দুটো কার্গো বিমান কোন কারণে, কি উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের বিমানবন্দরে অবতরণ করলো এবং অবতরণের পর তারা কী কাজে সময় ব্যয় করেছে তা বাংলাদেশের মানুষ জানতে চায়।
বাংলাদেশ ও ইসরায়েলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই, এবং বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ইসরায়েল ভ্রমণেও নিষেধাজ্ঞা আছে। খুব বেশি দিন আগে নয়, কয়েক বছর আগেই বাংলাদেশি পাসপোর্টে লেখা ছিল, ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড এক্সসেপ্ট ইসরায়েল’। জাতিসংঘভুক্ত যে ২৮টি দেশ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি।
সাম্প্রতিক অতীতে অনুসন্ধানকারী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে বাংলাদেশ ইসরায়েলের কাছ থেকে উন্নত নজরদারি সরঞ্জাম এবং স্পাইওয়্যার সংগ্রহ করেছে। এই প্রতিবেদনে আরো অভিযোগ করা হয়েছে যে বাংলাদেশী সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এবং বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা ও ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত। তবে এর আগে ইসরায়েল থেকে বাংলাদেশে সরাসরি ফ্লাইটের কোনো নজির নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করেছেন যে , জরুরী অবতরণ ছাড়া বাংলাদেশে পণ্য বহনকারী ইসরায়েল ফ্লাইটের অবতরণ একটি নজিরবিহীন ঘটনা। কারণ দুদেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই এবং বাংলাদেশ ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয় না। যে রাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই, সেই রাষ্ট্রের বিমানের অবতরণ রহস্যজনক ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাজায় গণহত্যাকারী মানবতার দুশমন ইসরাইলের বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বক্তব্য রেখে আসছেন অথচ সরকার জাতির সামনে এ ঘটনার রহস্য এখনো উন্মোচন করেনি। দুটি ফ্লাইটের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ।