Home বিনোদন বিয়ের পর ধর্ম পরিবর্তন নিয়ে কোনো চাপ পান নি সোনাক্ষী সিনহা

বিয়ের পর ধর্ম পরিবর্তন নিয়ে কোনো চাপ পান নি সোনাক্ষী সিনহা

Posted by on in বিনোদন 0
1st Image

বলিউডের নন্দিত তারকা সোনাক্ষী সিনহা আর তরুণ অভিনেতা জহির ইকবাল—দুজনের বিয়ে বলিউডে গত বছরের অন্যতম আলোচিত ঘটনা। একজন বড় পর্দায় নিজস্ব সাম্রাজ্য গড়ে তোলা সুপারস্টার পরিবারে বেড়ে ওঠা মেয়ে, অন্যজন মুসলিম সম্প্রদায়ের ছেলে হিসেবে ফিল্মি পরিমণ্ডলে ধীরে ধীরে পরিচিতি পাওয়া অভিনেতা। সব মিলিয়ে তাদের একসঙ্গে পথচলা ছিল বহু মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। রূপকথার মতো ঘটা এই বিয়েকে ঘিরে শুরু থেকেই নানা জল্পনা-কল্পনা ছিল। বিশেষ করে ধর্মান্তরকরণসহ সামাজিক চাপ, পরিবার মেনে নেবে কি না—এমন অসংখ্য প্রশ্নে মুখর ছিল বিনোদন দুনিয়া। কিন্তু অবশেষে সেসব বাধা পেরিয়ে তারা সুখী দম্পতি হিসেবে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন।

গত বছরের ২৩ জুন ধুমধাম করে বিয়ে সারেন সোনাক্ষী ও জহির। দুজনের ধর্মীয় পরিচয় আলাদা হওয়ায় অনুষ্ঠানও হয়েছে দুই ধর্মের রীতিনীতিতে। প্রথমে হিন্দু রীতি, পরে মুসলিম ধর্মীয় বিধান মেনেই সম্পন্ন হয় ঐতিহ্যমণ্ডিত বিবাহপর্ব। এরপর আইনগতভাবে ভারতের বিশেষ বিবাহ আইন মেনেও তাঁরা রেজিস্ট্রি করেন।

এর পরপরই বলিউডের নামী-দামী তারকার সমাবেশে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে বিবাহোত্তর সংবর্ধনা আয়োজিত হয়। সেখানে হাজির ছিলেন সালমান খান, কাজল, রেখাসহ আরও অনেকে। নবদম্পতির এই বর্ণাঢ্য আয়োজন চারদিকে বেশ উচ্ছ্বাসের তৈরি করে।সামাজিক মাধ্যমে তাঁদের প্রেমময় উপস্থিতি বলিউডের অনুরাগীদেরও বেশ আনন্দ দিচ্ছে। তবে সুখী মুহূর্তের ভিড়ে কিছু বিরূপ মন্তব্য ও সমালোচনাও সামনে এসেছে—বিশেষ করে ধর্ম পরিবর্তন ও পারিবারিক আপত্তি নিয়ে।


অনেকেই শুরুতে ধারণা করেছিলেন, সোনাক্ষীর বাবা শত্রুঘ্ন সিনহা হয়তো মেয়ের এই বিয়েতে অসম্মতি জানাবেন। কারণ, তিনি একদিকে পুরোনো ধারার বলিউডের অভিনেতা, অন্যদিকে রাজনীতিতেও সক্রিয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, তিনি একমাত্র মেয়ের বিয়েতে স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন এবং বেশ ধুমধাম করেই সব আয়োজন সম্পন্ন করেছেন। যদিও অনলাইন ও গণমাধ্যমে গুঞ্জন উঠেছিল, এ বিয়েতে শত্রুঘ্ন সিনহা নাকি প্রথমে আপত্তি তুলেছিলেন। তবে সমাপ্তিতে দেখা গেছে, পারিবারিক কোনো বিরোধ থাকেনি। বরং শত্রুঘ্ন নিজেই মেয়ের বিয়েকে আনন্দের সঙ্গে উদ্‌যাপন করেন।


বিয়ের পর থেকেই অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন—“সোনাক্ষী কি ধর্ম পরিবর্তন করেছেন?” কিংবা “মুসলিম রীতিতে বিয়ে বলে হয়তো পরিবার বা স্বামীর পক্ষ থেকে তাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে?”
সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে সোনাক্ষী স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, এ নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো জোরাজুরি নেই। বরং দুজনই একে অন্যের ধর্ম ও সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করেন। তিনি বলেন “আমাকে কখনোই জহির কিংবা তার পরিবার ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য চাপ দেয়নি। ধর্ম পরিবর্তনের প্রশ্নই ওঠে না, কারণ আমরা পরস্পরকে ভালোবাসি, একে অন্যকে বিয়ে করতে চেয়েছি। ধর্ম এ নিয়ে কোনো বাধা সৃষ্টি করেনি। আমাদের দুজনের ঘরানায় আলাদা আলাদা রীতি-রেওয়াজ আছে, তবে আমরা পরস্পরের ঐতিহ্যকে সম্মান করি।”

এই সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েই তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া গুজব বন্ধ করতে চেয়েছেন। পাশাপাশি তিনি এই বার্তাও দিয়েছেন যে, তাদের সম্পর্কের মূলভিত্তি হলো পারস্পরিক সম্মান ও ভালোবাসা—ধর্মের গণ্ডি সেখানে বড় কোনো প্রভাব ফেলেনি।

এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো—তাঁদের পারস্পরিক মূল্যবোধ। সোনাক্ষী ও জহির দুজনেই বেড়ে উঠেছেন বলিউডি সংস্কৃতির খোলামেলা পরিবেশে। একজনের হিন্দু পারিবারিক ঐতিহ্য, অন্যজনের মুসলিম ঐতিহ্য—দুজনের পরিবারই কিন্তু সিনেমার সঙ্গে জড়িত। এ ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, তাঁরা একে অন্যের অনুষ্ঠান-আচার সানন্দে গ্রহণ করেছেন।
- সোনাক্ষীর ভাষায়: “যখন আমার বাড়িতে পূজা বা অন্যান্য রীতিনীতি হয়, জহির সেখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়। আবার ওর বাড়িতে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলে আমিও সময় বের করে নিজে উপস্থিত থাকি।”

এভাবে পারিবারিক ঐতিহ্য ভাগাভাগি করাই তাঁদের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করেছে বলে মনে করছেন বলিউড সংশ্লিষ্টরা।

সোনাক্ষী নিজেই বলেছেন, “স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী বিয়ে করায় আমি আর জহির দুজনেই স্বস্তিতে ছিলাম। এখানেই ধর্ম পরিবর্তনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।”

বলিউডে আন্তধর্মীয় বিয়ে একেবারে নতুন কিছু নয়। অতীতেও বহু বিখ্যাত তারকা দুই ভিন্ন ধর্মের ঐতিহ্য একীভূত করে সুখী দাম্পত্য জীবন কাটিয়েছেন। যেমন:
- সাইফ আলী খান ও কারিনা কাপুর
- শাহরুখ খান ও গৌরী খান
- আরও অনেকে

সোনাক্ষী-জহিরের সম্পর্ককেও অনেকে তাই বড় পরিসরে দেখেন। তাঁরা মনে করেন, এই ভিন্নতা সত্ত্বেও প্রেম, শ্রদ্ধা আর পারিবারিক সমর্থন থাকলে অনায়াসে একত্রে থাকা সম্ভব।

যে সমাজ ব্যবস্থায় ধর্ম নিয়ে প্রায়ই বিভাজন দেখা যায়, সেখানে সোনাক্ষী ও জহিরের বিবাহ অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণার উদাহরণ। তারা দেখিয়ে দিয়েছেন, পারস্পরিক সম্মান ও ভালোবাসা থাকলে ধর্মীয় পার্থক্য বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। তবু সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে নানা গুঞ্জন, নেতিবাচক মন্তব্য চলেছে।
- কেউ কেউ বলেছেন, “মেয়েটি হয়তো ধর্মান্তরিত হচ্ছে।”
- আবার অনেকে প্রতীয়মান করছেন, “সমাজের চাপে বা বলিউডের প্রভাবশালী কারও পরামর্শে এমন সিদ্ধান্ত।”

কিন্তু সোনাক্ষীর সরাসরি উত্তর—“এ সবকিছুই গুজব।”

বিয়ে-পরবর্তী সময়ে সোনাক্ষী ও জহির বিভিন্ন অনুষ্ঠান, পার্টি ও সামাজিক অনুষ্ঠানে একসঙ্গে হাজির হচ্ছেন। সোনাক্ষী আগের মতোই বলিউড প্রজেক্টে ব্যস্ত, জহিরও নতুন ছবির কাজে মনোযোগী। তাঁরা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন,
1. একে অন্যের প্রতি আস্থা সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
2. ক্যারিয়ার নিয়ে আলোচনা ও পারস্পরিক পরামর্শ করেন।
3. উভয় পরিবার ভালোবেসে মেনে নিয়েছে এই দাম্পত্যকে।

সামাজিক মাধ্যমে দেখা গেছে, দুই পরিবার মিলে বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠান উদ্‌যাপন করছেন। কখনো জহিরকে নিয়ে সিনহা পরিবারের পূজার আয়োজনে, কখনো সোনাক্ষীকে নিয়ে ইকবাল পরিবারের পারিবারিক দাওয়াতে—এভাবেই এগিয়ে চলেছে তাঁদের সুখের জগৎ।

জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব হওয়ায় সোনাক্ষী-জহিরের ব্যক্তিগত জীবন সবসময় আলোচনায় থাকে। বিশেষ করে ধর্মান্তরকরণ, পারিবারিক আপত্তি বা ভবিষ্যতে সন্তানদের ধর্মীয় পরিচয়—এমন সব প্রশ্ন তাদের পিছু ছাড়ে না। যদিও এর বেশির ভাগই গুঞ্জন মাত্র।
- সোনাক্ষী বলেছেন, “ধর্ম আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় নয়; আমরা মানুষ হিসেবে একে অপরকে সম্মান করি।”
- তিনি আরও যোগ করেছেন, “গোপনীয়তা রক্ষা আমাদের অধিকার, কিন্তু ভক্তদের ভালোবাসা পেতে গিয়ে তা সব সময় সম্ভব হয় না।”