ডেঙ্গু কী? ডেঙ্গু জ্বরের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

Posted by on in অন্যান্য 0
1st Image

নিচের যে অংশটি সম্পর্কে জানতে চান, ক্লিক করুন

ডেঙ্গু (Dengue) কী?

ডেঙ্গু হলো একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা সৃষ্টি হয়। এটি মূলত সংক্রমিত হয় এডিস ইজিপ্টাই (Aedes aegypti) মশা দ্বারা যাকে প্রচলিত ভাষায় এডিস মশা বলা হয়। ক্ষেত্র বিশেষ অন্য মশা দ্বারা আক্রান্ত হলেও মানুষের মধ্যে বিশেষ করে এডিস ইজিপ্টাই নামক মশার মাধ্যমে এটি বেশি সংক্রমিত হয়। সাধারণত গ্রীষ্মমন্ডলীয় ও উপক্রান্তীয় জলবায়ুর অঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি দেখা যায়।

ডেঙ্গু জ্বরের কারণ (Causes of dengue fever) কী?

ডেঙ্গু রোগ যেহেতু মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাস জনীত কারণে হয় তাই এটির সংক্রমন শুরুতেই ধরা পড়েনা। আস্তে আস্তে লক্ষণগুলো স্পষ্ট হতে থাকলে রক্ত পরিক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু নিশ্চিত হয়। এই ডেঙ্গু ভাইরাসমূলত ফ্ল্যাভিভাইরাস পরিবারের অন্তর্ভুক্ত যার চারটি ভিন্ন স্ট্রেন বা ধরণ আছে। প্রত্যাটি ধরণের আলাদা জিনগত বৈচিত্র্য (variants) রয়েছে। নিচে এ নিয়ে আলোচনা করা হলো।

ডেঙ্গু ভাইরাস এর ধরণ (Dengue virus Variants)

আলাদা আলাদা জিনগত বৈচিত্র সম্পন্ন ডেঙ্গুর ৪ টি ধরণ রয়েছে। এগুলো প্রত্যাকটি একে অপরের থেকে আলাদা হলেও সবগুলো ভাইরাসই ডেঙ্গু রোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম। ভাইরাসের ধরণগুলো হলো-

  1. DENV-1 বা (ডেঙ্গু ভাইরাস টাইপ ১)
  2. DENV-2 বা (ডেঙ্গু ভাইরাস টাইপ ২)
  3. DENV-3 বা (ডেঙ্গু ভাইরাস টাইপ ৩)
  4. DENV-4 বা (ডেঙ্গু ভাইরাস টাইপ ৪)

ডেঙ্গুর ধরণ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ তথ্য-

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে কী শরীরে ইমিউনিটি বা এন্টিবডি উৎপন্ন হয়?

যদি কোন ব্যাক্তি DENV-1 ভেরিয়েন্ট দ্বারা আক্রান্ত হয় তাহলে তার শরীরে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে ইমিউনিটি উৎপন্ন হয় এবং ভবিষ্যতে এই ভেরিয়েন্ট দ্বারা আক্রান্তের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। তবে অন্যান্য ভেরিয়েন্ট যেমন : DENV-2, DENV-3 ও DENV-4 এর ক্ষেত্রে এমনটা হয়না।

ডেঙ্গুর প্রতিটি ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা কী আলাদা আলাদা সংক্রমনের সম্ভাবনা আছে?

হ্যাঁ। ডেঙ্গুর যেকোন একটি ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা একবার আক্রান্ত হলেও পরবর্তে একই ভেরিয়েন্ট অথবা অন্য ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন টাইপ ১ দ্বারা একবার আক্রান্ত হলে পরবর্তে টাইপ ২ বা অন্যান্য ধরণ দ্বারা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।

ডেঙ্গুতে দ্বিতীয়বা আক্রান্ত কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ?

কোন ব্যাক্তি যদি ডেঙ্গুর অন্যকোন ভেরিয়েন্ট দ্বারা দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হন তাহলে সে ক্ষেত্রে ডেঙ্গু মারাত্মক রূপ নিতে পারে। দ্বিতীয়বার আক্রান্তে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (DHF) বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে (DSS) রুপ নিতে পারে। ফলসরুপ তা মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণসমূহ (Dengue Symptoms)

ডেঙ্গু জ্বরের প্রাথমিক লক্ষণ (Dengue fever early symptoms) : ডেঙ্গু যেহেতু এডিস মশার কামড় থেকে হয়ে থাকে তাই মশার কামড়ের কিছু দিন পর থেকেই এর লক্ষণ সমূহ স্পষ্ট হতে থাকে। ডেঙ্গুর সাধারণ আলাদা বিশেষ কোন লক্ষণ নেই। তবে মানুষ ভেদে ৪-১০ দিনের মধ্যে কিছু সাধারণ লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে। লক্ষণগুলো হলো-

  • উচ্চ মাত্রায় জ্বর : হঠাৎ তীব্র জ্বর দেখা দেয় যা প্রায় ১০৪ ডিগ্রির কাছাকাছি থাকে।
  • তীব্র মাথাব্যাথা :জ্বরের সাথে সাথে তীব্র মাথা ব্যাথা দেখা দেয় যা কপাল বা এর আশেপাশে স্থায়ী হয়।
  • চোখের পেছনে ব্যাথা : এট ডেঙ্গুর একটি অতিপরিচিত লক্ষণ।
  • পেশি এবং জয়েন্টের ব্যথা: এটি "ব্রেকবোন ফিভার" নামে পরিচিত। এর লক্ষণ হলো শরীরের প্রত্যাক জয়েন্ট ও পেশিতে ব্যাথা সৃষ্টি হওয়া।
  • ফুসকুড়ি উঠা : লক্ষণ সমূহ দেখা দেয়ার দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় নাম্বার দিনে গায়ে ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
  • বমি বমি ভাব ও অবসাদ : সারা দিন শরীর দুর্বল অনুভূত হয়ে থাকা ও বমি বমি ভাব হওয়া।
  • বিভিন্ন গ্রন্থি ফুলে যাওয়া : কারো কারো শরীরের বিভিন্ন স্থানে গ্রন্থি ফুলে যেতে দেখা যায়।

উপরোক্ত সাধারণ লক্ষণের পর যদি ডেঙ্গু গুরুতর আকার ধারণ করে অরথ্যাৎ উপসর্গগুলো আরও গুরুতর হয়ে উঠে। তখন একে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (DHF) বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (DSS) বলা হয়। এই স্টেজের লক্ষণগুলো হলো-

  • অবিরাম বমি
  • তীব্র মাথা ব্যাথা
  • অভ্যন্তরীন রক্তপাত
  • প্রস্রাবের সাথে রক্তপাত
  • মাড়ি ও নাক থেকে রক্তপাত
  • প্লাটিলেটের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়া
  • ত্বক ফ্যাকাশে ও ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
  • খুব তৃষ্ণার্ত বোধ করা
  • পায়খানার সাথে রক্ত আসা ও
  • দুর্বল বোধ করা

ডেঙ্গু পরিক্ষা (Tests For Dengue Fever) কিভাবে করে?

ডেঙ্গুর লক্ষণ স্পষ্ট হওয়ার পর চূড়ান্তাভাবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডেঙ্গুর পরিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ । তবে এই পরিক্ষারও কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে। ডেঙ্গু পরীক্ষা সাধারণত লক্ষণ শুরু হওয়ার ৩-৭ দিনের মধ্যে করা হয়। নিচে ডেঙ্গু টেস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হলো-
ডেঙ্গু জ্বরের জন্য সাধারণত ৫ ধরণের টেস্ট করা হয়। এগুলো হলো-

  1. NS1 অ্যান্টিজেন টেস্ট: দ্রুত এবং নির্রযোগ্য ডেঙ্গু শনাক্ত করতে প্রাথমিক পরীক্ষা হিসেবে NS1 একটি ভালো পরিক্ষা। এটি সংক্রমণের প্রথম ১-৭ দিনের মধ্যে কার্যকরী। এই পরিক্ষা মূলত Non-structural protein 1 ভাইরাসের প্রোটিন শনাক্ত করে থাকে। শুরুর দিকে এই ভাইরাসের প্রোটিন রক্তে থাকে বলে প্রথম ১-৭ দিনের মধ্যে এই পরিক্ষা করতে হয়।
  2. ডেঙ্গু অ্যান্টিবডি (IgM এবং IgG) টেস্ট: এটি শরীরে IgM অ্যান্টিবডি পরিক্ষার জন্য দেয়া হয়। ডেঙ্গুতে সংক্রমিত হওয়ার ৪-৫ দিন পর শরীর IgM অ্যান্টিবডি তৈরি করতে শুরু করে ফলে এ সময় IgM টেস্টের মাধ্যমে ডেঙ্গুর প্রাথমিক সংক্রমণ হয়েছে কীনা তা বুঝা যায়।
    আর IgG অ্যান্টিবডি প্রায় ১০-১৪ দিন পর রক্তে উপস্থিত হয়। তখন টেস্টে যদি IgG এর মান বেশি থাকে তাহলে পুরনো সংক্রমণ আছে বলে ধরা হয়।
  3. RT-PCR টেস্ট: এটি ডেঙ্গু ভাইরাসের জিনগত উপাদান দ্বারা ভাইরাসের ধরন শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। আক্রান্তের প্রথম ৫ দিনের মধ্যে (Reverse Transcription Polymerase Chain Reaction) টেস্ট করা হলে ভাইরাস সহজে শনাক্ত করা যায়। যথাযথভাবে এই পরিক্ষার মাধমে সহজেই ভাইরাসের (DENV-1, DENV-2, DENV-3, DENV-4) ধরণ শনাক্ত করা যায়।
  4. CBC (Complete Blood Count) টেস্ট: এই পরিক্ষার মাধ্যমে রক্তের প্লাটিলেটের সংখ্যা চেক করা হয়। যেমন : যেমন লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা ও হেমোগ্লোবিন। তবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে সাধারণত প্লাটিলেটের সংখ্যা হ্রাস পায়। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যাও কমে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে এই রক্ত কণিকার সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে কমেছে কীনা তা চেক করতেই CBC টেস্ট করা হয়। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ কারণ রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে গেলে রোগীর নাক, কান ইত্যাদি দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে। এ অবস্থায় CBC টেস্ট করে দ্রুত রুগীর শরীরে প্লাটিলেট বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হয়।
  5. ELISA টেস্ট (Enzyme-Linked Immunosorbent Assay): এটি মূলত ডেঙ্গু ভাইরাসের অ্যান্টিজেন বা অ্যান্টিবডি শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। অ্যান্টিজেন শনাক্তের জন্য এটি একটি নির্ভরযোগ্য পরিক্ষা।

ডেঙ্গু রোগীর খাবারের তালিকা

অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষের মতে প্রাথমিক অবস্থায় একজন ডেঙ্গু রোগী যেকোন নরম খাবার খেতে পারে। কিন্তু অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার খাওয়া খাওয়া উচিত নয়। পাশাপাশি রোগী যদি ডায়বেটিসে আক্রান্ত হন তাহলে ডায়বেটিসের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন নরম, পাতলা ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে।
এগুলোর বাইরেও যদি রোগীর অবস্থা খারাপ হয়। বমি বা অন্যকোন কারণে সাধারণ খাবার গ্রহণ করতে না পারে তাহলে সেক্ষেত্রে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে উপযুক্ত খাবার নির্বাচন করতে হবে। নিচে ডেঙ্গু রোগীর জন্য উপযোগী কিছু খাবারের তালিকা দেয়া হলো:

  • তরল খাবার ও পানিয় : ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী তরল পদার্থ জাতীয় খাবার সহজে খেতে ও হজম করতে পারে। ফলে দ্রুত শক্তিবর্ক হিসেবে নিচের তরল খাবার রোগীকে দেয়া যেতে পারে। যেমন :
    পানি : অন্তত দিনে ৮-১০ গ্লাস
    ফলের রস: ইলেকট্রোলাইট বৃদ্ধির জন্য পেঁপে পাতার রস, কমলার রস ও ডাবের পানি খুবই উপকারি।
    স্যুপ ও ORS: শরীরে পুষ্টি ও ইলেকট্রোলাইটের মাত্রা ঠিক রাখতে সবজি স্যুপ ও স্যালাইন খাওয়ানো উচিত। তবে স্যালাইনের মাত্রা ডাক্তারের পরামর্ অনুযায়ী দিতে হবে।
  • ফল ও সবজি: ফলের মধ্যে পেঁপেঁ, কমলা, মাল্টা, বেদানা, লেবু খাওয়ালে ভালো। এগুলো প্লাটিলেট বাড়াতে সাহায্যে করে। আর সবজির মধ্যে রয়েছে পালং শাক ও মুলা শাক।
  • প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার : ডাল, ডিম, চিকেন স্যুপ ও মাছ প্রোটিনের ভালো উৎস। এর মধ্যে মাছ আবার ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সরবারহ করে ফলে অল্প সময়ে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার: এই খাবারের অন্তর্ভুক্ত হলো সেদ্ধ চাল, ওটমিল, খিচুড়ি ও আলু। এগুলো সহজে হজম হয় এবং দ্রুত শক্তি সরবারহ করে থাকে। পাশাপাশি অল্প পরিমানে প্লাটিলেট বাড়াতেও সাহায্যে করে।
  • প্লাটিলেট সমৃদ্ধ খাবার : ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে রোগী মারা যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো প্লাটিলেট কমে যাওয়া। এক্ষেত্রে যতো দ্রুত সম্ভব রোগীর শরীরে প্লাটিলেট পুশ করতে হয় অথবা যদি রোগী খেতে পারে তাহলে প্লাটিলেট বাড়াতে সাহায্যে করে এমন খাবার খাওয়াতে হয়। এক্ষেত্রে পেঁপে পাতা রস, বেদানা, আনার রস, গাজর ও বিট প্লাটিলেট বাড়াতে খুবই কার্করি ভূমিকা পালন করে।

তাই সম্ভব হলে পেঁপেঁ পাতার রস খাওয়ানো উচিত। এটি বাজারে প্রচলিত পাপায়া ট্যাবলেটের চেয়ে বেশি কার্যকরি।

ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ (Dengue fever prevention) করা যায় কিভাবে?

ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য প্রধান কাজই হলো এডিস মশার বিস্তার রোধ ও মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা। এডিস মশা পূর্বে দিনে সংক্রিয় থাকলেও এখন এর স্বভাবে পরিবর্তন এসেছে । গবেষণায় দেখা গেছে দিনের পাশাপাশি এখন রাতেও এডিস মশা সংক্রিয় থাকে। ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য নিচের উপায়গুলো অনুসরণ করা যেতে পারে:

মশার বিস্তার রোধ : মশার বিস্তার রোধে কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে যেমন :

  • বাড়ির আশেপাশে বিভিন্ন পাত্রে জমে থাকা পানি ফেলে দেয়া।
  • বাড়ির আশেপাশে জমে থাক ময়লা ও পরিত্যাক্ত সামগ্রি ‍পরিষ্কার করা।
  • ঝোপ-ঝাড় থাকলে তা কেটে ফেলা।
  • মশার উপদ্রপ বেশি হলে কীটনাশক স্প্রে করা।
  • বাড়ির আশেপাশে পুকুর থাকলে তাতে লার্ভিসাইড ব্যবহার করা।

মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা : মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা অন্যান্য পদক্ষেপের তুলনায় একটি কঠিন কাজ। তাই এই বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন অত্যান্ত জরুরি। আর এ জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন :

  • মশারি ব্যবহার: দিন ও রাত উভয় সময় ঘুমানোর পূর্বে মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে মশারি ব্যবহার করুন।
  • ক্রিম ব্যবহার : শরীরে মশা প্রতিরোধক ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষ করে শরীরের উন্মুক্ত অংশে।
  • লম্বা জামা পরিধান : শরীরের উন্মুক্ত অংশ ঢেকে রাখার জন্য দিন ও রাতের বেলা লম্বা হাতা বিশিষ্ট জামা ও প্যান্ট পরিধান করা যেতে পারে।
  • মশা তাড়ানোর মেশিন ব্যবহার : মশার কামড় প্রতিরোধের জন্য মশা মারার ব্যাট বা লিকুইড ভ্যাপোরাইজ করে এমন মেশিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • দরজা-জানালা বন্ধ রাখা : সন্ধ্যার সময় ঘরের ভেতরে বাতি বন্ধ করে ফ্যান ছেড়ে দিলে মশা বাহিরে বেরিয়ে যায়। আর বাকী সময় ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখলে অথবা জানালায় নেট ব্যবহার করলে মশা থেকে অনেকটাই পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
  • ডেঙ্গু প্রতিরোধী টিকা (Dengue vaccine): কিছু দেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধে টিকা অনুমোদিত রয়েছে। যেমন : Dengvaxia। তবে এই টিকা কেবল পূর্বে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যাক্তিদের জন্য কার্যকর। পাশাপাশি এটি সবার জন্য সহজলভ্যও নয়। তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা রাখা: ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যাক্তিকে পরিবারে আলাদাভাবে রাখা যাতে করে মশা তাকে কামড়িয়ে ভাইরাস ছড়াতে না পারে।
  • সচেতনতা বৃদ্ধি: ডেঙ্গুর ভয়াভহতা ও উপরোক্ত পদক্ষেপ সম্পর্কে পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবকে সচেতন করা যাতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

FAQ বা ডেঙ্গু নিয়ে সাধারণ জিঙ্গাসা

সাধারণ মশার মতো 'ডেঙ্গু মশা' কামড়ালেও কি ফুলে যায়?

ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশার নাম এডিস ইজিপ্টাই মশা হলেও এটি ডেঙ্গ মশা নামে পরিচিত। ডেঙ্গু মশা কামড়ালে ওই স্থানটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিছুটা ফুলে যায় এবং চুলকায়। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে এটি নাও হতে পারে। মূলত মশা কামড়ানোর পূর্বে কিছুটা ব্যথানাশক ঘন তরল মানুষের ত্বকের ভেতর ছড়িয়ে দেয়। ফলে মশা কামড় দিয়ে চলে গেলে কিছুক্ষণ পর যখন তরলের কার্যকারিতা শেষ হয়ে যায় তখন ব্যাথা অনুভূত হয়।

ডেঙ্গু মশা (Dengue Mosquito) কীভাবে চিনবো?

 এডিস ইজিপ্টাই (Aedes aegypti)

ডেঙ্গু ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করে ফিমেল এডিস ইজিপ্টাই মশার কামড়ানোর মাধ্যমে। ডেঙ্গু মশা দেখতে একটু ছোট আকৃতির হয়। দৈর্ঘ্য মাত্র ৪ থেকে ৭ মিলিমিটার। এডিস ইজিপ্টাইর পিঠে বীণার তারের মতো দাগ থাকে। স্ত্রী মশারা পুরুষদের তুলনায় লম্বা হয়। এডিস ইজিপ্টাই মশার শরীরে কালো-সাদা ডোরাকাটা দাগ থাকে। বাঘের শরীরের ডোরাকাটা দাগের সঙ্গে মিল আছে বলে একে টাইগার মশাও বলা হয়। এ প্রজাতির মশা সাধারণত স্বচ্ছ-পরিষ্কার পানিতে থাকে। ফেলে দেওয়া টায়ার, পাত্র, নির্মীয়মাণ বাড়ির চৌবাচ্চার মতো জায়গায় পানি জমে থাকলে এ মশা ঘর বাঁধতে পারে। আর সেখানেই ডিম পাড়ে। শুধুমাত্র গ্রীষ্ম বা বর্ষায় এই মশা ডিম পাড়ে।

আর্মিগিয়ার মশা ও এডিস মশার মধ্যে পার্ক্য কী?

এডিস ইজিপ্টাই মশা বা প্রচলিত নাম এডিস মশা সাধারণত মাঝারি আকারের হয়ে থাকে এবং এর গায়ে-পায়ে সাদা কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে। আর্মিগিয়ার মশারও একই শারীরিক গঠন তবে এটি এডিস মশার তুলনায় একটু বড় হয়। আরেকটি পার্ক্য হলো এডিস মশার পায়েও ডোরাকাঁটা দাগ থাকে যা আর্মিগিয়ার মশার থাকেনা।

এডিস মশা কামড়ালেই কি ডেঙ্গু হয়?

এ বিষয়ে ড. কবিরুল বাশার জানান, এডিস মশা কামড়ালেই যে ডেঙ্গু হবে বিষয়টি মোটেও তেমন নয়। যদি এডিস মশাটি ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা পূর্ সংক্রমি হয়ে থাকে তাহলে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার কোন সাধারণ মশাও যদি ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যাক্তির দেহে থেকে রক্ত পান করে সুস্থ মানুষের শরীরে কামড়ায় তাহলে সেখান থেকেও ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়াতে পারে।

ডেঙ্গু মশা কামড়ানোর পর কী করণীয়?

ডেঙ্গু মশা একবার কামড়ালে সেটি রক্তের সাথে যুক্ত হয়ে যায় এবং সে ক্ষেত্রে কিছু করার থাকেনা বলে জানিয়েছেন ডা. কাবিরুল বাশার। তবে যদি মশা কামড়ানোর পর ভাইরাসটি শুধুমাত্র চামড়ার ওপরে লেগে থাকে তাহলে ঐ স্থানটি সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে ধুলে ভাইরাস মারা যায় বলেও জানান তিনি।

ডেঙ্গু মশা কোথায় থাকে ও কোথায় ডিম পাড়ে?

এডিস মশা সাধারণত শুকনো এবং ছায়াযুক্ত নিরাপদ স্থানে বিশ্রাম নেয়। কারো কারো মতে এটি পরিষ্কার জায়গা ভালোবাসে। তবে কয়েকদিন ধরে স্থির থাকা পানির পাত্রের কিনারায় এটি ডিম পাড়ে । পানি নোংরা কীংবা পরিষ্কার হোক সব পানিতেই এটি ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার পর “ ডিম ফুটে লার্ভা হয়, লার্ভা থেকে পিউপা ও পিউপা থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা তৈরি হয়”।

ডেঙ্গু জ্বর কয় ধরণের ও ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে?

চিকিৎসকদের মতে ডেঙ্গু জ্বর ২ ধরণের হয়ে থাকে। যথা: ক্লাসিকাল এবং হেমোরেজিক। এই দুটি ধরণের মধ্যে ক্লাসিকাল ডেঙ্গু সাধারণত পাঁচ থেকে সাত দিন এবং সবোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। কিন্তু হেমোরেজিক ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাদের মতে এটি হবার পরপরই অনেকের প্লেটলেট এবং রক্তচাপ কমতে শুরু করে। কারো কারো ক্ষেত্রে যদি এটি যদি ডেঙ্গু হেমোরেজিক শক সিন্ড্রোমে চলে যায় তাহলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হতে থাকে। আর একবার আক্রান্ত হলে এটি সেরে উঠতে কী পরিমাণ সময় লাগবে তা ক্ষতির উপর নিভর করে।

ডেঙ্গু জ্বর কী ছোঁয়াচে রোগ?

ডেঙ্গু কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যাক্তিকে স্পর্শ, তার জিনিসপত্র ব্যবহারে ডেঙ্গু রোগ ছড়ায়না বলে জানিয়েছেন তারা। তবে আক্রান্ত রোগীর রক্ত যদি মশা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে সুস্থ মানুষের শরীরে লাগে বা প্রবেশ করে তাহলে আক্রান্ত হতে পারে।