এমপক্স কী :
গুটিবসন্তের একই গোত্রীয় রোগ হলো এমপক্স। এমপক্স রোগের জন্য মূলত দায়ী মাঙ্কিপক্স ভাইরাস। পূর্বে এটি পরিচিত ছিল মাঙ্কিপক্স নামে। কিন্তু পরবর্তীতে প্রাণীর প্রতি বিদ্বেষমূলক দৃষ্টিভঙ্গি এড়াতে এর নাম দেয়া হয় এমপক্স। শুরুতে এটি শুধু পশু থেকে মানুষে সংক্রমিত হতো। এরপর নতুন ভেরিয়েন্টে হাজির হয় এই মাঙ্কিপক্স ভাইরাস। এখন এটি ছড়াচ্ছে মানুষ থেকে মানুষেও।
এমপক্সের উৎপত্তি স্থল ও বর্তমান অবস্থা :
মূলত আফ্রিকায় ২০২২ সালে এটি প্রথম বানরের মধ্যে শনাক্ত হয়। এরপর আস্তে আস্তে এটি মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হওয়া শুরু করে। আফ্রিকার ৩৪টি দেশে এখন পর্যন্ত মাঙ্কিপক্স সংক্রমিত হয়েছে। ২০২৪ এর শুরু থেকে কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে ৫২৪ জনের মৃত্যু হয় ও ১৪ হাজারের বেশি সংক্রমিত হয়। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর এমপক্সের সংক্রমন ১৬০ শতাংশ ও মৃত্যুর হার ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বর্তমানে এটি আফ্রিকা হতে এর প্রতিবেশি কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন: বুরুন্ডি, রুয়ান্ডা, উগান্ডা এবং কেনিয়াতে এর সংক্রমণ দেখা গেছে যা সাধারণত অন্যান্য সময় দেখা যায়না। এর পাশাপাশি ইউরুপের কয়েকটি দেশও এর ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কয়েকদিন আগে পাকিস্তানেও ২ জন এমপক্সের ভাইরাসে শনাক্ত হন। পরে তাদের আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
এমপক্সের লক্ষণ বা উপসর্গ :
এমপক্সের প্রাথমিক কিছু উপসর্গ বা লক্ষণ রয়েছে। এগুলো হলো -
১. জ্বর,
২. ক্লান্তি,
৩. মাথা ব্যাথা,
৪. ঘর্মাক্ত হওয়া,
৫. মাংশ ও পেশিতে ব্যাথা ও লিম্প নোড ফোলা।
প্রাথমিক লক্ষণ শেষে বা প্রথমিক লক্ষণগুলোর পাশাপাশি কিছু চূড়ান্ত লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন -
৬. জ্বর শেষে বা জ্বর চলাকালীন ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
৭. ফুসকুড়িগুলো জ্বালাপোড়া ও ব্যাথা দায়ক হয়।
৮. ফুসকুড়িগুলো পুরু আস্তরে পরিণত হয়ে পড়ে যায় এবং দেহে এদের দাগ রয়ে যায়।
এমপক্সের ধরণ :
মোটা দাগে এমপক্সের প্রধান দুটি ধরণ রয়েছে (১) ক্লেড ১ (২) ক্লেড ২।
ক্লেড ১ এর আবার দুটি ভেরিয়েন্ট । যথা-
১. ক্লেড ১ এ
২. ক্লেড ১ বি
এদের মধ্যে ক্লেড ১ পূর্বে সাধারণত সংক্রমিত বুশমিট খেলে ছড়াতো। কিন্তু বর্তমানে ক্লেড ১ বি ভেরিয়েন্ট মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হচ্ছে এবং এর সংক্রমন কেনিয়া, রুয়ান্ডা ও উগান্ডায় বেশি দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি এই ভেরিয়েন্টটি প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছে।
এমপক্সের ঝুকি ও সংক্রমন :
বিশেষজ্ঞদের মতে এখনো ক্লেড ১বি সম্পর্কে অনেক কিছু জানার বাকি। তবে এমপক্সে সবচেয়ে বেশি রিস্কে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন ব্যাক্তিরা। এদিকে আবার অধিক শারিরীক সম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম ব্যাক্তিরাও আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি । অর্থ্যাৎ যারা একাধিক মানুষের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে । যেমন : সমকামি পুরুষ, মহিলা ও বহুগামীদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যাচ্ছে। এদের মধ্যে নতুন যৌন সঙ্গিরা বেশি ঝুকিতে রয়েছেন। গর্ভবতী নারীদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তাদের ক্ষেত্রেও এ দ্রুত রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
পূর্বে এমপক্সে সংক্রমিত কোন বন্য প্রাণি যেমন : কাঠবিড়াল, বাদর, ইদুর ইত্যাদি থেকে সংক্রমিত হতো। তবে বর্তমানে এর ক্লেড বি ভেরিয়েন্ট মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হচ্ছে।
সাধারণত সরাসরি মুখ, নাক, চোখ ও যৌনাঙ্গের দ্বারা এটির দ্রুত বিস্তার ঘটে। যদি কেউ আক্রান্ত ব্যাক্তির ব্যবহৃত কোন জিনিসপত্র বা নিত্যপ্রয়োজনীয় কথা-বার্তা ও সংস্পর্শে থাকেন তাহলে তিনি সহজেই আক্রান্ত হতে পারেন।
এমপক্সের প্রতিকার ও প্রতিরোধ :
এমপক্সের প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্য সচেতনতার পাশাপাশি রয়েছে টিকার ব্যবস্থাও। তবে এই টিকা কেবল সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা ব্যাক্তি বা রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে থাকা ব্যাক্তিরাই নিতে পারেন। কারণ হলো এর সরবরাহ কম ও সংক্রমণ বেশি।
তবে এটি প্রতিরোধের জন্য কিছু নিয়ম অনুসরণ করা যেতে পারে। সংক্রমিত অঞ্চলে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। অধিক পরিমানে যৌনকর্মীদের সাথে মিলন হতে বিরত থাকা। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমানে খাবার গ্রহণ করা ও লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের শ্বরণাপন্ন হওয়া।