প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুকে অপসারণের ভারতীয় ষড়যন্ত্র ফাঁস

Posted by on in আন্তর্জাতিক 0
1st Image

ওয়াশিংটন পোস্টের অনুসন্ধান

 

মালদ্বীপের চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ভারতের গোপন ষড়যন্ত্র ফাঁস করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট। ৩০ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) মালদ্বীপের বিরোধী দল এমডিপি (মালদ্বীপ ডেমোক্রেটিক পার্টি)-র কিছু সদস্যের সঙ্গে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এই ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা শুরু করে। 

ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা

পরিকল্পনা অনুযায়ী, মালদ্বীপের ৪০ জন পার্লামেন্ট সদস্যকে মোহাম্মদ মুইজ্জুর বিরুদ্ধে আনা অভিশংসন প্রস্তাবে ভোট দেওয়ার জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করা হয়। এমনকি প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর নিজ দলের কিছু সদস্য এবং মালদ্বীপ সেনাবাহিনীর ১০ জন জেনারেলকে প্রভাবিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ৬ মিলিয়ন ডলার দাবি করে বিরোধী রাজনীতিকরা।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মুইজ্জুকে অপসারণের পরিকল্পনার জন্য তৈরি একটি গোপন ডকুমেন্ট, যার নাম ডেমোক্রেটিক রিনিউয়াল ইনিশিয়েটিভ, ফাঁস হয়। এই ডকুমেন্টে ষড়যন্ত্রের বিস্তারিত বিবরণ উঠে আসে। ২০২৩ সালের শেষ দিকে মুইজ্জুর ভারতবিরোধী অবস্থানের কারণে তিনি ভারতের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে তার চীনপন্থি নীতি এবং মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা তাকে আরও বিপজ্জনক করে তোলে।

ষড়যন্ত্রের ব্যর্থতা

দীর্ঘ কয়েক মাসের গোপন আলোচনা ও ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও পর্যাপ্ত সমর্থন না পাওয়ায় এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু ষড়যন্ত্রের কথা জেনে তার দলের শক্তি বাড়াতে বিরোধী দলের ১১ জন সদস্যকে নিজের দলে নিয়ে আসেন। এমডিপির এই সদস্যরা মুইজ্জুর পক্ষে কাজ করতে শুরু করেন।

এদিকে, পরিকল্পনার ব্যর্থতা এবং মুইজ্জুর শক্ত অবস্থানের কারণে ষড়যন্ত্রকারীরা শেষ পর্যন্ত পিছু হটে। তারা আশঙ্কা করে যে, মুইজ্জুকে অপসারণ করা হলে জনগণ রাস্তায় নেমে আসতে পারে এবং সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করতে পারে।

ভারতের ভূমিকায় বিতর্ক

ওয়াশিংটন পোস্ট আরও জানায়, ভারতীয় দূতাবাসে কর্মরত 'র'য়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা এবং ভারতের সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা শিরিষ থোরাতসহ কিছু ব্যক্তি ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে এই পরিকল্পনার সঙ্গে ভারতের সরকারের সরাসরি সম্পৃক্ততা সম্পর্কে তারা কিছু বলতে রাজি হননি।

ভারত-মালদ্বীপ প্রতিযোগিতা

মালদ্বীপ তার কৌশলগত অবস্থানের কারণে চীন ও ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মালদ্বীপের শিপিং লাইনগুলো মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্প মালদ্বীপে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে, যা ভারতকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। চীনের প্রভাব মোকাবিলায় ভারত বরাবরই মালদ্বীপের বিরোধী দলগুলোকে সমর্থন দিয়ে এসেছে।

মুইজ্জুর শক্ত অবস্থান

২০২৩ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর বিজয় মালদ্বীপের জনগণের মধ্যে ‘ভারত আউট’ আন্দোলনকে শক্তিশালী করে। নির্বাচিত হয়েই মুইজ্জু ঘোষণা দেন যে, কোনো বিদেশি সেনা মালদ্বীপে থাকতে পারবে না। চীনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভারত-মালদ্বীপ সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

ছোট্ট মালদ্বীপে এই ষড়যন্ত্র এশিয়ায় ভারতের ভূমিকা এবং চীনের সঙ্গে তার প্রতিযোগিতার নতুন মাত্রা তুলে ধরে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত যে দীর্ঘদিন ধরে তাদের অনুগত রাজনীতিকদের ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে, এটি তারই আরেকটি উদাহরণ।