Home অর্থনীতি গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ সংকটের শঙ্কা, দ্রুত বকেয়া পরিশোধের দাবি

গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ সংকটের শঙ্কা, দ্রুত বকেয়া পরিশোধের দাবি

Posted by on in অর্থনীতি 0
1st Image

২০২৫ সালের গ্রীষ্মে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন (বিইপপা)। সংগঠনটি সতর্ক করে জানিয়েছে, বকেয়া পরিশোধ না করা হলে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হবে, যার ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আড়াই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হতে পারে।

বিদ্যুৎ খাতে বকেয়া বিলের বিশাল অঙ্ক

বিইপপা জানিয়েছে, বর্তমানে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বকেয়া বিলের পরিমাণ ১৬ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ফার্নেস তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বকেয়া প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এই বকেয়ার কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। ফার্নেস তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারছে না, ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকায় সরবরাহ ঘাটতি দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনকে গভীর সংকটে ফেলতে পারে।

বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদন সংকট

বিইপপা বলছে, মার্চ থেকে বিদ্যুতের চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়বে এবং গ্রীষ্মে এটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে। সম্ভাব্য সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা দিয়ে গ্যাস থেকে ৬ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট, কয়লা থেকে সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াট, এবং আমদানি থেকে ২ হাজার ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতে পারে।

তবে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন না হলে পুরো সিস্টেমে বিশাল ঘাটতি দেখা দেবে। এই ঘাটতি মেটাতে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সচল রাখা জরুরি বলে মনে করছে বিইপপা।

বকেয়া পরিশোধের দাবি ও চুক্তি বাস্তবায়ন

বিইপপা চুক্তি অনুসারে ৩০ দিনের বেশি বকেয়া না রাখার নিয়মের কথা উল্লেখ করেছে। কিন্তু বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) প্রায় ১৮০ দিনের বেশি সময় ধরে বকেয়া রেখে চলেছে, যা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। বিইপপা নেতারা বলছেন, সরকারের উচিত দ্রুত এই বকেয়া পরিশোধ করা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোকে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনা। তা না হলে গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ সঙ্কট চরম আকার ধারণ করবে।

বিদ্যুৎ খাতে লুটপাট ও চুক্তির পর্যালোচনা

পূর্ববর্তী সরকারের আমলে দরপত্র ছাড়া একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে। এতে বিদ্যুৎ খাতের ব্যবসায়ীরা লুটপাটের সুযোগ পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি এবং বিদ্যুতের ট্যারিফ (দাম) পর্যালোচনার জন্য দুটি কমিটি গঠন করেছে। সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমানোর জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের কথা বলেছে। তবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরছেন বিদ্যুৎ খাতের অনেক ব্যবসায়ী।

ডলারের অবমূল্যায়ন ও ক্ষতির প্রভাব

ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্ষতি বেড়ে চলেছে। বিইপপপা বলছে, ডলারের অবমূল্যায়নের ফলে তাদের প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্র ভাড়ার মাধ্যমে তারা কতটা লাভ করেছে, তা নির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেননি বিইপপা নেতারা।

প্রাথমিক জ্বালানিতে উচ্চ করারোপ ও উৎপাদন ব্যয়

বিইপপা নেতারা প্রাথমিক জ্বালানিতে উচ্চ করারোপ নিয়ে সমালোচনা করেছেন। তাঁরা বলছেন, ভারত, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, এবং পাকিস্তানের মতো দেশগুলোতে জ্বালানির ওপর এত বেশি কর নেই। বাংলাদেশে উচ্চ করারোপ বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং এ খাতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করছে।  

সরকারের সঙ্গে আলোচনা ও সমাধানের প্রস্তাব

বিইপপা জানায়, সরকারের সঙ্গে বকেয়া পরিশোধ এবং বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের বিষয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। তবে এখনও কার্যকর কোনো সমাধান আসেনি। বিইপপা নেতারা মনে করেন, বকেয়া পরিশোধ এবং চুক্তির শর্ত পুনরায় আলোচনা করা হলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমানো সম্ভব। পাশাপাশি সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের টেকসই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যাবে।

গ্রীষ্মের বিদ্যুৎ সংকটের সম্ভাব্য প্রভাব

গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া না হলে জনজীবন চরমভাবে ব্যাহত হবে। লোডশেডিংয়ের কারণে শিল্প খাত, কৃষি, এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।

সরকার, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সমন্বিত উদ্যোগেই এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব। এই সংকট মোকাবেলায় সরকারের সুষ্ঠু পদক্ষেপ প্রয়োজন, যা বিদ্যুৎ খাতকে আরও কার্যকর এবং টেকসই করে তুলবে।