বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে প্রবাসী আয়। রেমিট্যান্সের প্রবাহ এখন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মাঝে এই খাত দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে বড় অবদান রাখছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়কালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪২৭ কোটি ৬৮ লাখ মার্কিন ডলার—যা প্রায় ৪.২৮ বিলিয়ন ডলার। এটি দেশের মোট প্রবাসী আয়ের ১৭.৫০ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্যান্য দেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন একটি বিতর্কিত প্রস্তাব সামনে এনেছেন। তাঁর উদ্যোগে 'ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট' নামক একটি বিলের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী অভিবাসীদের পাঠানো অর্থের ওপর ৫ শতাংশ কর আরোপের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এই আইন অনুযায়ী, মার্কিন নাগরিক ছাড়া সব অভিবাসীদের পাঠানো অর্থ করযোগ্য হবে—এতে গ্রিন কার্ডধারী ও এইচ-১বি ভিসাধারীরাও অন্তর্ভুক্ত। কর আরোপের জন্য কোনো ন্যূনতম অর্থসীমা নির্ধারণ করা হয়নি, অর্থাৎ কম পরিমাণ অর্থ পাঠালেও কর দিতে হবে। ফলে বাংলাদেশের প্রবাসীরাও এই প্রস্তাবিত নীতির আওতায় পড়বেন।
১ হাজার ১১৬ পৃষ্ঠার বিশাল বিলটি ইতোমধ্যে মার্কিন কংগ্রেসের হাউস অব রেপ্রেজেন্টেটিভসে ১৭-১৬ ভোটে অনুমোদন পেয়েছে। এখন এটি সিনেটে উপস্থাপন করা হবে। বিলটি আইনে পরিণত হলে, বৈধ চ্যানেলে প্রবাসী আয় পাঠানোর প্রবণতায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই কর বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্সে সরাসরি প্রভাব পড়বে। অর্থনীতিবিদ ও রেমিট্যান্স-নির্ভর পরিবারগুলো আশঙ্কা করছেন, এতে বৈধ পথে টাকা পাঠানোর পরিমাণ কমে যেতে পারে এবং বিকল্প (অঅনুষ্ঠানিক) উপায় বেছে নিতে পারেন অনেক প্রবাসী।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনই সরকারের উচিত সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে কূটনৈতিক আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া এবং প্রবাসীদের জন্য সহজতর রেমিট্যান্স প্রেরণ ব্যবস্থাপনা তৈরি করা।