Home আন্তর্জাতিক আফ্রিকা পাচার হওয়া ১৭৬ বাংলাদেশি ফিরলেন লিবিয়া থেকে

পাচার হওয়া ১৭৬ বাংলাদেশি ফিরলেন লিবিয়া থেকে

Posted by on in আন্তর্জাতিক 0
1st Image

অবৈধভাবে লিবিয়া পাড়ি দিয়ে আটক, নির্যাতন ও পাচারের শিকার হওয়া ১৭৬ জন বাংলাদেশিকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে তাদের বহনকারী বিশেষ একটি ফ্লাইট ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়।

ফেরত আসা অভিবাসীদের মধ্যে ১০৬ জন ত্রিপলির একটি বন্দিশিবিরে আটক ছিলেন। তারা বিভিন্ন সময় মানবপাচারকারীদের মাধ্যমে লিবিয়ায় গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। বন্দিশিবিরের অমানবিক পরিস্থিতি এবং ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়ে তারা দেশে ফেরার আকুতি জানায়।

অন্যদিকে, আরও ৭০ জন প্রবাসী চরম বিপদে পড়ার কারণে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। অনেকেই সেখানে কাজের সুযোগ না পেয়ে চরম দারিদ্র্য, নিপীড়ন ও অপমানের শিকার হয়েছেন। লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর সহায়তায় এই প্রবাসীদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে। বুধবার লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস এই ফেরার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। বাংলাদেশ দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ১৯ ও ২৬ মার্চ আরও দুটি বিশেষ ফ্লাইটে প্রায় ৩০০ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

লিবিয়ায় অবৈধভাবে যাওয়া বাংলাদেশিদের অধিকাংশই মানবপাচারকারীদের প্রলোভনে পড়ে দেশত্যাগ করেন। তারা উচ্চ বেতনের চাকরির স্বপ্নে দালালদের হাতে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে লিবিয়ায় পাড়ি জমায়। কিন্তু বাস্তবে তাদের ঠাঁই হয় বন্দিশিবিরে, যেখানে তারা ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হন। অনেকের পরিবার মুক্তিপণের জন্য দালালদের কাছে বিশাল অঙ্কের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, লিবিয়া বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও আইনশৃঙ্খলার সংকটে রয়েছে। সেখানে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য পরিস্থিতি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক বাংলাদেশি মানবপাচারের ফাঁদে পড়ে বিপদে পড়ছেন এবং বহুজন নিখোঁজ রয়েছেন। বাংলাদেশ সরকার অবৈধ অভিবাসন রোধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় নিয়মিতভাবে লিবিয়াসহ বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে আটকে পড়া প্রবাসীদের ফেরত আনার ব্যবস্থা নিচ্ছে।

সরকার ও আইওএম-এর উদ্যোগে গত বছরের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪,৫০০ বাংলাদেশিকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ফেরত আনা যথেষ্ট নয়; অবৈধ অভিবাসন রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন যে, বিদেশে কাজের জন্য বৈধ ও সঠিক পথ অনুসরণ করা উচিত। দালালদের মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসনের চেষ্টা করলে এটি শুধু ব্যক্তির জন্য নয়, তার পরিবারের জন্যও ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে।

সরকারি সংস্থা এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের উচিত অবৈধ অভিবাসনের ভয়াবহতা সম্পর্কে প্রচারণা চালানো এবং দালালদের দমন করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। তবেই ভবিষ্যতে এই ধরনের ট্র্যাজেডি এড়ানো সম্ভব হবে।