বাংলাদেশি পোশাক শিল্পে ট্রাম্পের নীতির কী প্রভাব পড়তে পারে?
মাত্র কয়েকদিনের অপেক্ষা। ২০শে জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করবেন। তার শাসনামলে যে চ্যালেঞ্জগুলো সামনে আসছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো অবৈধ অভিবাসীদের বের করে দেওয়া এবং আমদানি পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি। ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রভাব বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের রপ্তানি খাতে বড়সড় পরিবর্তন আনতে পারে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক বাড়লে এর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশি গার্মেন্টস শিল্পে। বাংলাদেশি পোশাক আমদানিতে যদি শুল্ক বৃদ্ধি পায়, তবে সেই পণ্য বেশি দামে কিনতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের। ফলে পণ্যের চাহিদা কমে যেতে পারে, যা উভয় দেশের ক্রেতা ও প্রস্তুতকারকদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
ট্রাম্পের শাসনে সম্ভাবনা ও শঙ্কা
অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক ম্যাগাজিন উলনিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের শাসনামলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-সহ বিভিন্ন বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। এর ফলে বৈশ্বিক রপ্তানি প্রতিযোগিতা বাড়বে।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮২৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যেখানে শুল্ক ছিল শতকরা ১৫.৬২ ভাগ। বিজিএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির সময় রপ্তানি হার ১৭ থেকে ১৯ শতাংশের মধ্যে উঠানামা করেছে।
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের চীনা পণ্যের ওপর বেশি শুল্ক আরোপের কারণে যুক্তরাষ্ট্র বিকল্প সরবরাহকারী খুঁজতে বাধ্য হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশি পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। কম শ্রম খরচ ও প্রতিষ্ঠিত প্রস্তুতকারকদের অবকাঠামোর কারণে বাংলাদেশ এই প্রতিযোগিতায় সুবিধা পেয়েছে।
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সম্ভাবনা
বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানিকারকরা মনে করেন, ট্রাম্প যত চীনবিরোধী হবেন, বাংলাদেশের জন্য তত বেশি সুযোগ সৃষ্টি হবে। চীনের ওপর শুল্ক আরোপের ফলে কাজের অর্ডার বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে যদি বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয় বা ভোক্তাদের চাহিদায় পরিবর্তন আসে, তাহলে গার্মেন্টস খাতের রপ্তানি কমে যেতে পারে।
বাংলাদেশ যদি যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা না পায়, তাহলে শুল্ক খরচ বেড়ে যাবে। কম্বোডিয়া, পাকিস্তান এবং আফ্রিকার বেশ কিছু দেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের প্রতিযোগিতা কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
ভোক্তাদের চাহিদা ও দাম বৃদ্ধির শঙ্কা
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশনের মতে, শুল্ক বৃদ্ধির ফলে পোশাকের দাম ১২.৫ থেকে ২০.৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এতে ভোক্তারা তাদের চাহিদা ২২ থেকে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে ফেলতে পারেন। ফলে বাংলাদেশের মতো রপ্তানিকারক দেশগুলো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে।
বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতের জন্য ট্রাম্পের শুল্ক নীতি একইসঙ্গে সম্ভাবনা ও শঙ্কার সৃষ্টি করেছে। সঠিক কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।