বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন যে, আগামী মাসগুলোতে ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকবে। সোমবার (মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে) তিনি এ তথ্য দেন।
আমদানি ও ব্যয়ের বর্তমান অবস্থা
গভর্নরের মতে, ডলারের ওপর অতিরিক্ত চাপ আসার সম্ভাবনা নেই, কারণ বড় আমদানি খরচের সময়সীমা শেষ হতে যাচ্ছে।
খাত | আমদানি ও ব্যয়ের বর্তমান অবস্থা |
---|---|
আমদানি এলসি (LC) | ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে প্রচুর এলসি খোলা হলেও ফেব্রুয়ারিতে কমবে। |
সার আমদানি | বোরো মৌসুমের জন্য প্রয়োজনীয় সার কেনা সম্পন্ন হয়েছে, নতুন করে আমদানি লাগবে না। |
বিদ্যুৎ খাত | কিছু ডলার চাহিদা থাকবে, তবে বড় ধরনের চাপ আসবে না। |
হজ খরচ | হজের জন্য বড় রকমের পেমেন্ট ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। |
ডলার রিজার্ভ ও রেমিট্যান্স প্রবাহ
ড. আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, "প্রতি বছর রমজান ও হজ মৌসুমে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ে। এই বছরও সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে আশা করছি।" তিনি জানান, গত সাত মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহে ২৪% প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বাংলাদেশ যদি বছরে রেমিট্যান্স থেকে ৬ বিলিয়ন এবং রপ্তানি থেকে ৫-৬ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করতে পারে, তাহলে অতিরিক্ত ১১-১২ বিলিয়ন ডলার যোগ হবে, যা আমদানি খরচ সহজেই মেটাতে পারবে।
নতুন মুদ্রানীতি ও বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন মুদ্রানীতিতে "ক্রলিং পেগ এক্সচেঞ্জ রেট" ব্যবস্থা চালু করার কথা বলা হয়েছে। এটি বিনিময় হারকে স্থিতিশীল ও নমনীয় রাখতে সহায়তা করবে।
মূল পরিবর্তনসমূহ:
- বাংলাদেশ ব্যাংক এখন আর বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে হস্তক্ষেপ করবে না।
- মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণের জন্য নতুন গণনা পদ্ধতি চালু করা হয়েছে, যা প্রতিদিন দুবার ব্যাংকগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রকাশ করা হয়।
- এই ব্যবস্থা রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, রপ্তানি কার্যক্রমকে উদ্দীপিত করা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করবে।
সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রভাব
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই মুদ্রানীতি ও ডলার ব্যবস্থাপনার ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে।
প্রভাব | সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা |
---|---|
রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি | রমজান ও হজ মৌসুমে বৈদেশিক আয় বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা। |
রপ্তানির প্রসার | মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকলে রপ্তানিকারকদের আস্থা বাড়বে। |
বিনিয়োগের গতি | বিনিয়োগকারীরা মুদ্রার স্থিতিশীলতার কারণে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে পারবে। |
মূল্যস্ফীতি হ্রাস | আমদানি ব্যয় কমলে পণ্যের দামও স্বাভাবিক থাকবে। |
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন মুদ্রানীতি ও বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা দেশকে একটি স্থিতিশীল বৈদেশিক মুদ্রার বাজারের দিকে নিয়ে যাবে। এতে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে, ডলারের অতিরিক্ত চাহিদা কমবে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নতুন এই ব্যবস্থা দেশের দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।