Home বাংলাদেশ কূটনীতি ৫৫তম বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলনের যৌথ বিবৃতি

৫৫তম বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলনের যৌথ বিবৃতি

Posted by on in বাংলাদেশ 0
1st Image

৫৫তম বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলন সম্প্রতি ভারতের নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে উভয় দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। ১৭-২০ ফেব্রুয়ারি চার দিনব্যাপী এই সম্মেলনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এর শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল ও আলোচনার মূল বিষয়বস্তু  

বাংলাদেশের পক্ষে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। অপরদিকে ভারতের পক্ষে বিএসএফ মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরী এর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেন।

সম্মেলনে প্রধানত সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ব্যাপারে জোরালো আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া ১৫০ গজের মধ্যে স্থায়ী স্থাপনা ও কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বিষয়ে উভয় দেশের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ পরিদর্শকদল এর মাধ্যমে সমাধানের প্রস্তাব দেওয়া হয়।

আঙ্গরপোতা-দহগ্রাম সীমান্ত ও নদী ভাঙন রোধে উদ্যোগ

আঙ্গরপোতা-দহগ্রাম সীমান্তের শূন্যরেখায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে যৌথ পরিদর্শন ও আলোচনা এর মাধ্যমে সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এছাড়া সীমান্তবর্তী নদীর ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার এবং ভারতের উজান থেকে পানি ছেড়ে দেওয়ার ফলে সৃষ্ট বন্যা এড়াতে অগ্রিম সতর্কীকরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়।

মাদক ও অস্ত্র পাচার রোধে পারস্পরিক সহযোগিতা

মাদক, অস্ত্র, স্বর্ণ ও অন্যান্য দ্রব্য চোরাচালান রোধ এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধে উভয় পক্ষ একযোগে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা কার্যকর করার মাধ্যমে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়।  

বিএসএফ-এর অ-প্রাণঘাতী নীতি অনুসরণের প্রতিশ্রুতি

বিএসএফ মহাপরিচালক সীমান্তে মানবাধিকার রক্ষায় অ-প্রাণঘাতী নীতি অনুসরণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। এছাড়া মাদক পাচার ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধে উভয় দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান ও সমন্বয় বাড়ানোর কথা বলেন।  

সিদ্ধান্তসমূহ ও ভবিষ্যত কর্মসূচি

এবারের সম্মেলনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:  
- সীমান্তে নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো ও হত্যার ঘটনা শূন্যের কোঠায় আনা।
- ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যৌথ টহল বৃদ্ধি এবং অগ্রিম গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান।  
- সীমান্তবর্তী এলাকায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে যৌথ কর্মসূচি।  
- সীমান্তে স্থাপনা নির্মাণে যৌথ পরিদর্শন ও সমন্বয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ।  

আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনে যৌথ উদ্যোগ

ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা, গবাদি পশু, স্বর্ণ, অস্ত্র, জাল মুদ্রা সহ বিভিন্ন চোরাচালান রোধ এবং মানব পাচার প্রতিরোধে উভয় পক্ষ তথ্য বিনিময় ও যৌথ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্মেলনে উভয় পক্ষ সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির প্রশংসা করেন। পাশাপাশি, যৌথ খেলাধুলা, সংস্কৃতি বিনিময় এবং যৌথ রিট্রিট সিরিমনি আয়োজনের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির বিষয়ে একমত হন।  

৫৫তম বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলন পারস্পরিক সহযোগিতা ও সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা, মাদক পাচার ও অপরাধ দমনে যৌথ উদ্যোগ এবং অ-প্রাণঘাতী নীতি অনুসরণ এই সম্মেলনের উল্লেখযোগ্য অঙ্গীকার। উভয় দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এই সমন্বিত উদ্যোগ ও পারস্পরিক আস্থা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে বলে আশা করা হচ্ছে।