আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচারকাজ মাত্র সাত দিনের মধ্যেই শুরু হবে। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, এই মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সরকার আইনি কাঠামো পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, আছিয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তদারকি করা হচ্ছে। সন্ধ্যার মধ্যেই পোস্ট-মর্টেম রিপোর্ট পাওয়া যাবে, এবং ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টও ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থায় এই মামলার বিচার দ্রুত শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য ও সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো এই ধরনের অপরাধের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, যাতে অন্য কেউ এমন ঘৃণ্য অপরাধ করার সাহস না পায়। অতীতে ৭-৮ দিনের মধ্যেই কিছু বিচার সম্পন্ন হয়েছে, তাই আমরা আশাবাদী যে, এই মামলার বিচারও দ্রুত সম্পন্ন হবে।” নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সরকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আসিফ নজরুল জানান, শুধুমাত্র শিশু ধর্ষণ ও বলাৎকারের মতো অপরাধগুলোর বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল তৈরি করা হবে, যেখানে স্বল্প সময়ের মধ্যে বিচারকাজ সম্পন্ন করা হবে। এই ট্রাইব্যুনালের গেজেট প্রকাশ করা হবে আগামী রোববার।
তিনি আরও বলেন, “আমরা নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করছি। এই নতুন আইন আগামী রোববার অথবা সোমবার কার্যকর হবে। এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ যা নির্যাতিতদের দ্রুত বিচার প্রাপ্তির পথ সুগম করবে।” আছিয়ার ঘটনায় যাতে কোনো অরাজকতা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান ড. নজরুল। তিনি বলেন, “সরকার চায় অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে। চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন, তবে এই ঘটনায় কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।”
এই ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে, আছিয়াকে আজ হেলিকপ্টারে করে তার বাড়িতে নেওয়া হবে। সাথে একজন উপদেষ্টাও থাকবেন, যিনি পুরো প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টাও তার সাথে থাকবেন বলে জানা গেছে। বর্তমান আইন পরিবর্তন করে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার উদ্যোগ সরকারের বড় ধরনের আইনি সংস্কারের ইঙ্গিত দেয়। এই আইন বাস্তবায়ন হলে, নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে এবং অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন আইনের ফলে এই ধরনের অপরাধের সংখ্যা হ্রাস পাবে এবং সাধারণ মানুষ আইনের প্রতি আরও আস্থা পাবে। বিশেষ করে, ধর্ষণের মতো অপরাধের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ বহুদিনের, যা এই উদ্যোগের মাধ্যমে অনেকাংশে কমে আসবে।
সরকার আগামীতে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করার পরিকল্পনা করছে, যা ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মতো অপরাধের জন্য দ্রুততম সময়ে বিচারের পথ সুগম করবে। এই আইন বাস্তবায়ন হলে অপরাধীরা কঠোর শাস্তি পাবে এবং নির্যাতিতরা দ্রুত ন্যায়বিচার পাবে।