এক দশকের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো চার দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে তিনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। এই সফর বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে রোহিঙ্গা সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে নতুন দিক উন্মোচনের আশা করা হচ্ছে।
শুক্রবার জাতিসংঘ মহাসচিব কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন তার সফরসঙ্গী হবেন। কক্সবাজারে পৌঁছানোর পর, জাতিসংঘ মহাসচিব প্রথমেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাবেন এবং সেখানে শিশুদের জন্য একটি বিশেষ ক্যাম্পেইনে অংশ নেবেন। তিনি রোহিঙ্গাদের পুষ্টি ও সহায়তার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একটি বিশদ প্রেজেন্টেশনও শুনবেন। এরপর তিনি রোহিঙ্গা কালচারাল সেন্টারে গিয়ে একটি সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগ করবেন। একইসঙ্গে তিনি কক্সবাজারের একটি লার্নিং সেন্টার পরিদর্শন করবেন, যেখানে রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হবে। এই কর্মসূচি শেষে তিনি প্রধান উপদেষ্টার সৌজন্যে লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারেও অংশ নেবেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরের অংশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা কক্সবাজার বিমানবন্দরের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। এছাড়া তিনি জলবায়ু উদ্বাস্তু কেন্দ্র এবং একটি মডেল মসজিদ পরিদর্শন করবেন। এই আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে ইফতারে যোগ দেবেন। দিন শেষে তারা উভয়েই ঢাকায় ফিরে আসবেন। শনিবার জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকায় জাতিসংঘের কার্যালয় পরিদর্শন করবেন। এরপর তিনি ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
এই সফরের মূল আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কাড়তে পারে। জাতিসংঘ মহাসচিবের বক্তব্যে এই সংকটের সমাধানের জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের আরও বেশি সম্পৃক্ততা এবং সহায়তার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। শনিবার বিকেলে জাতিসংঘ মহাসচিব একটি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন, যেখানে তিনি বাংলাদেশ সফর সম্পর্কে তার মূল্যায়ন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করবেন। সংবাদ সম্মেলনের পর প্রধান উপদেষ্টা তার সম্মানে একটি ইফতার ও নৈশভোজের আয়োজন করবেন। রোববার সকালে জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশ ছেড়ে যাবেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক ও মানবিক সহায়তা আনতে সহায়ক হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ সরকার। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, প্রতি মাসে রোহিঙ্গাদের জন্য অন্তত ১৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রয়োজন, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরের মাধ্যমে এই সহায়তা পুনরায় সচল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য জাতিসংঘ আগামী সেপ্টেম্বরে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে, যেখানে ফিনল্যান্ড ও মালয়েশিয়া কো-স্পন্সর হিসেবে যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ আশা করছে, এই সম্মেলনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান বেরিয়ে আসবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও সমর্থন নিশ্চিত হবে।