আগামী ১৩ থেকে ১৬ মার্চ, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চার দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন। এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, রোহিঙ্গা সংকট এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা।
জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে, কারণ এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে আন্তোনিও গুতেরেস এই সফরে আসছেন। ৭ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা ইস্যু ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান। সেই সাক্ষাতে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্রটি গুতেরেসের হাতে তুলে দেওয়া হয়। জাতিসংঘের এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে, যেখানে রাজনৈতিক ও মানবিক ইস্যুগুলো আলোচনার শীর্ষে থাকবে।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের মহাসচিবের সফরের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা হলো রোহিঙ্গা সংকট। মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীর আশ্রয় এবং তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এই সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে এই সফরে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের কৌশল এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা পাওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া, "রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং তাদের মানবাধিকার সুরক্ষা" নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘের কাছ থেকে আরো সমর্থন প্রত্যাশা করছে। বিশেষত, মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে জাতিসংঘের রোহিঙ্গাবিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। কাতারের রাজধানী দোহায় এই সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে আলোচনা চলছে, যা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও মনোযোগ আকর্ষণ করবে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এর আগে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। সেই সফরের সময় তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন এবং রোহিঙ্গাদের মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বাড়ানোর জন্য জোর দেন। তার আগের সফরের অভিজ্ঞতা এবং এই সফরের নতুন উদ্দেশ্যগুলো মিলিয়ে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের মধ্যে আরও গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গুতেরেসের এই সফরের রাজনৈতিক গুরুত্বও কম নয়। বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা এবং আগামীর নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে কৌতূহল রয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
এছাড়া, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নত করার জন্য এই সফরকে কাজে লাগানো হবে। বিশেষ করে, "রোহিঙ্গা সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তন" বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহায়তা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরও জোরদার হবে। বাংলাদেশ সরকারের আশা, গুতেরেসের এই সফরের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সহায়তা আরও বাড়বে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, "জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর শুধু মানবিক ইস্যু নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নতুন মাত্রা যোগ করবে।" এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের উদ্যোগ এবং আন্তর্জাতিক ফান্ডিং পাওয়ার বিষয়েও আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের এই সফর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সহযোগিতা পাওয়ার নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে।