সংযুক্ত আরব আমিরাতের আকাশে যেন আগুন নেমে এসেছে। গত শুক্রবার (মে মাসের মাঝামাঝি) দেশটির আবুধাবির একটি অঞ্চলে রেকর্ড করা হয় ৫০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা, যা এ পর্যন্ত মে মাসে রেকর্ডকৃত সর্বোচ্চ। মরুভূমি অধ্যুষিত এই তেলসমৃদ্ধ দেশটি এমনিতেই চরম আবহাওয়ার জন্য পরিচিত হলেও এবারকার গরম যেন সেই পরিচিতিকে হার মানিয়েছে।
শুক্রবারের এই ভয়াবহ গরমে জুমার নামাজ পড়তে গিয়ে বহু মুসল্লি শারীরিকভাবে কষ্ট অনুভব করেন। কেউ কেউ অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার উপক্রম হন। নামাজে অংশ নেওয়া এক যুবক জানান, “আমি দেরি করেছিলাম, তাই মসজিদের বাইরে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে হয়। নামাজ শেষে মনে হচ্ছিল শরীরটা আর ধরে রাখতে পারছি না।”
সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র জানিয়েছে, এটি ২০০৩ সাল থেকে আবহাওয়া পরিমাপের শুরুর পর থেকে মে মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আগের রেকর্ডটি ছিল ২০০৯ সালে—৫০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
অক্টোবরে সিওপি২৮ জলবায়ু সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এই দেশটিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরও প্রকটভাবে সামনে আসছে। মাত্র মাসখানেক আগেই এপ্রিলেও গড় তাপমাত্রা ছিল ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি।
তাপমাত্রা যতই বাড়ুক না কেন, আর্দ্রতা যখন ৮০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, তখন শ্বাস নেওয়াও দুঃসহ হয়ে ওঠে। দুবাইয়ের একজন ৩১ বছর বয়সী বিপণন কর্মকর্তা বলেন, “চোখের সামনে এক ব্যক্তি হঠাৎ কাঁপতে শুরু করলেন, তারপর রাস্তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। এমন অবস্থায় মানুষের কী হবে, বুঝে উঠতে পারছিলাম না।”
৪৫ বছর বয়সী ইউসুফ, যিনি দুবাইয়ে পর্যটকদের জন্য হট এয়ার বেলুন পরিচালনা করেন, বলেন, “এমন গরমে মনে হচ্ছিল কিছুই করতে পারছি না। সবচেয়ে বড় সমস্যা আর্দ্রতা—শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। বাতাসে যেন অক্সিজেন নেই।”
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বারবার ফিরে আসা গরমের ঢেউ জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম পরিণতি। শুধু তাই নয়, গত ৩০ বছরে বিশ্বজুড়ে চরম গরমের দিন সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে এই প্রবণতা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) ২০২৪ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, আরব দেশগুলোতে কর্মরত অভিবাসী শ্রমিকদের ৮৩.৬ শতাংশই চরম তাপমাত্রার ঝুঁকির মধ্যে আছেন—এটা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ।
গত বছর সৌদি আরবে হজ পালনের সময় ১৩০০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারান, যাদের অনেকেই ছিলেন অননুমোদিত হাজি এবং দীর্ঘসময় সূর্যের নিচে থাকার কারণে মৃত্যুবরণ করেন।
গ্রিনপিস পরিচালিত ২০২২ সালের একটি গবেষণা বলছে, মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের উষ্ণতার হার বিশ্বের গড় হারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। এর ফলে অঞ্চলটি মারাত্মক খাদ্য ও পানির ঘাটতির ঝুঁকিতে রয়েছে।