স্যাটেলাইট নির্ভর উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা এখন বাংলাদেশে আর স্বপ্ন নয়—এবার তা বাস্তব। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান SpaceX পরিচালিত Starlink আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রযুক্তি দুনিয়ার আলোচিত উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের মালিকানাধীন এই সেবা এখন থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে।
কীভাবে অর্ডার করবেন স্টারলিংক?
যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট–সেবা স্টারলিংক পেতে হলে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে।
১। Starlink ওয়েবসাইটে যান।
২। "Residential" অপশন নির্বাচন করুন।
৩। "Order Now" এ ক্লিক করে ঠিকানা ও তথ্য দিন।
৪। অনলাইন পেমেন্ট করে অর্ডার সম্পন্ন করুন।
অর্ডার দেওয়ার ৩–৪ সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম—including অ্যান্টেনা, রাউটার, পাওয়ার সাপ্লাই ইত্যাদি—গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যাবে। স্টারলিংকের দাবি, সেটআপ প্রক্রিয়াটি সহজ এবং গ্রাহক নিজেই এটি সম্পন্ন করতে পারবেন।
সেবার খরচ ও প্যাকেজ বিস্তারিত
বর্তমানে স্টারলিংক বাংলাদেশে দুটি প্যাকেজ চালু করেছে: Residential Package & Residential Light
স্টারলিংক প্যাকেজ ও খরচের বিবরণ:
প্যাকেজ নাম | মাসিক ফি | এককালীন সেটআপ খরচ | ইন্টারনেট গতি |
---|---|---|---|
Residential | ৬,০০০ টাকা | ৪৭,০০০ টাকা | সর্বোচ্চ ৩০০ Mbps |
Residential Light | ৪,২০০ টাকা | ৪৭,০০০ টাকা | সর্বোচ্চ ২০০ Mbps |
উভয় প্যাকেজেই এককালীন ৪৭,০০০ টাকার সরঞ্জাম কিনতে হবে। এতে থাকবে রিসিভার, রাউটার, কিকস্ট্যান্ড, তার এবং পাওয়ার সাপ্লাই। স্টারলিংক প্রতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ ৩০০ এমবিপিএস গতির সীমাহীন ইন্টারনেট সরবরাহ করতে সক্ষম।
সেটআপ কিটে যা থাকছে:
- রিসিভার অ্যান্টেনা
- কিকস্ট্যান্ড
- রাউটার
- পাওয়ার সাপ্লাই
- কানেকশন তার
একাধিক ব্যবহারকারীর জন্য সুবিধা
একটি স্টারলিংক ডিভাইস ২০–৬০ মিটার এলাকার মধ্যে ইন্টারনেট কাভারেজ দিতে পারে। ফলে গ্রামাঞ্চলে একাধিক ব্যক্তি মিলে এটি কিনে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে পারবেন। এতে খরচও সাশ্রয়ী হবে এবং উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা প্রত্যন্ত এলাকাতেও পৌঁছাবে।
✅ স্টারলিংকের সুবিধাসমূহ
সুবিধা | ব্যাখ্যা |
---|---|
🔹 উচ্চগতি | ১০০–৩০০ Mbps পর্যন্ত স্পিড, ভিডিও স্ট্রিমিং ও অনলাইন ক্লাসের জন্য আদর্শ |
🔹 দুর্গম এলাকায় সেবা | যেখানে মোবাইল বা ব্রডব্যান্ড পৌঁছায় না, সেখানেও সহজেই ইন্টারনেট পাওয়া যায় |
🔹 স্বতন্ত্র সেটআপ | ব্যবহারকারী নিজেই সরঞ্জাম স্থাপন করতে পারেন, টেকনিশিয়ান প্রয়োজন হয় না |
🔹 নিরবচ্ছিন্ন কানেক্টিভিটি | বিদ্যমান ফাইবার বা মোবাইল লাইনের ওপর নির্ভরশীল নয় |
🔹 অনলাইনে সরাসরি অর্ডার | ওয়েবসাইট থেকে সহজেই অর্ডার ও পেমেন্ট করা যায় |
❌ স্টারলিংকের অসুবিধাসমূহ
অসুবিধা | ব্যাখ্যা |
---|---|
⚠️ খরচ তুলনামূলক বেশি | এককালীন ৪৭,০০০ টাকা সেটআপ খরচ এবং মাসে ৪–৬ হাজার টাকা সাবস্ক্রিপশন |
⚠️ আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীলতা | বৃষ্টি বা ঝড়ের সময় সিগন্যাল দুর্বল হয়ে পড়তে পারে |
⚠️ সাইবার নিরাপত্তা | বিদেশি নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে সচেতনতা জরুরি |
⚠️ সীমিত কভারেজ রেঞ্জ | প্রতিটি ডিভাইস ২০–৬০ মিটার পর্যন্ত কাভার করে; বড় এলাকায় অতিরিক্ত ডিভাইস লাগতে পারে |
স্টারলিংকের দ্রুত অনুমোদন এবং সেবা চালুর পেছনে বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিকতা ও আগ্রহ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ১৩ ফেব্রুয়ারি ইলন মাস্কের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন এবং ৯০ দিনের মধ্যে সেবা চালু করতে নির্দেশনা দেন। এরপর বিটিআরসি ১০ বছরের লাইসেন্স প্রদান করে এবং ২৯ মার্চ বিডা বিনিয়োগ নিবন্ধন দেয়।
নিরাপত্তার বিষয়েও সরকার সজাগ। প্রাথমিকভাবে স্টারলিংক বিদেশি গেটওয়ের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছে, তবে অদূর ভবিষ্যতে তাদের স্থানীয় গেটওয়ে ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, স্টারলিংকের সকল কার্যক্রম জাতীয় নিরাপত্তা আইনের আওতায় থাকবে এবং এনটিএমসির সঙ্গে ইতোমধ্যে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে।
বর্তমানে দেশে মোবাইল টাওয়ারগুলোর প্রায় ৭০% এখনো ফাইবার অপটিকে সংযুক্ত নয়, যার ফলে ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল। স্টারলিংক সেই শূন্যতা পূরণে সক্ষম। একটি মাত্র সেটআপ বক্স দিয়েই গ্রামীণ এলাকাগুলোতে সরকারিভাবে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
সরকার বিশ্বাস করে, স্টারলিংকের সফল বাস্তবায়ন দেশের প্রযুক্তিখাতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করবে। ইতিমধ্যে অ্যামাজন কুইপার, ওয়ান ওয়েব, টেলিসেট এবং চীনা কোম্পানি জিডব্লিউ বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।