যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ বিষয়ক বেসরকারি কোম্পানি অ্যাসট্রোফর্জ গ্রহাণু থেকে বাণিজ্যিকভাবে খনিজ আহরণের উদ্যোগ নিয়েছে। এই সপ্তাহের শেষে, কোম্পানিটি এক নতুন পর্যায়ে পৌঁছাতে যাচ্ছে, যেখানে তারা একটি গ্রহাণু থেকে খনিজ অনুসন্ধান করবে। এ কাজে ব্যবহার করা হবে ‘ওডিন’ নামক একটি রোবটচালিত ক্ষুদ্র যান, যা গ্রহাণুতে খনিজ সন্ধান এবং বিশ্লেষণ করবে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যাসট্রোফর্জ ইতোমধ্যে পৃথিবীর কক্ষপথে একটি মহাকাশযান পাঠিয়েছে এবং তা পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করেছে।
অ্যাসট্রোফর্জের লক্ষ্য এখন পৃথিবীর কাছাকাছি অবস্থিত গ্রহাণু ‘২০২২ ওবি৫’কে টার্গেট করা, যা তাদের দ্বিতীয় মহাকাশযান ‘ওডিন’ দ্বারা পরীক্ষা করা হবে। এই মহাকাশযানটি আগামী ২৬ শে ফেব্রুয়ারি স্পেসএক্স ফলকন ৯ রকেটের মাধ্যমে মহাকাশে পাঠানো হবে। রকেটটি ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে এবং ৪৫ মিনিট পর ‘ওডিন’ আলাদা হয়ে এককভাবে গ্রহাণুর উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে। ‘ওডিন’ ০.৬ মাইল দূরত্ব থেকে সাদা-কালো ক্যামেরার মাধ্যমে গ্রহাণুর ছবি সংগ্রহ করবে, যা ধাতব বস্তুর আকার এবং পরিমাপের জন্য ব্যবহার করা হবে।
‘২০২২ ওবি৫’ গ্রহাণু এম-টাইপ শ্রেণীতে পড়েছে, এবং বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন এতে প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার টন প্লাটিনাম রয়েছে। এটি পৃথিবীতে প্লাটিনাম সরবরাহের জন্য একটি বিরাট সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। ‘ওডিন’ মহাকাশযান তৈরিতে প্রায় ৬৫ লাখ ডলার খরচ হয়েছে, যা এই প্রজেক্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত অর্জন।
এই মিশনের সফল বাস্তবায়ন হলে, এটি মহাকাশ থেকে খনিজ আহরণের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে, যা ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক মহাকাশ খনন শিল্পের ভিত্তি তৈরি করবে। অ্যাসট্রোফোর্জের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাট গিয়ালিচ বলেন, “এটি যদি সফল হয়, তাহলে এটি সম্ভবত সবচেয়ে বড় বিজনেস হতে পারে।”
এদিকে, অ্যাসট্রোফোর্জ ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ বা ২০২৬ সালের শুরুতে তৃতীয় গ্রহাণু মিশন পরিচালনা করার পরিকল্পনা করছে। এই মিশনে আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে, যার মধ্যে ব্রোকর-১ মিশনের উন্নত সংস্করণ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। গত ২০২৩ সালে তাদের প্রথম মিশন (ব্রোকর-১) কক্ষপথে পৌঁছালেও, এটি কিউবস্যাটের প্রোটোটাইপ রিফাইনারি প্রযুক্তি সক্রিয় করতে ব্যর্থ হয়।
বৃটেনের প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রয়েড মাইনিং কোর-এর প্রতিষ্ঠাতা মিচ হান্টার-স্কালিয়ন জানিয়েছেন, “১ কিলোমিটার ব্যাসের একটি গ্রহাণু যদি প্লাটিনাম বহন করে, তাহলে সেখানে ১ লাখ ১৭ হাজার টন প্লাটিনাম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। যা ৬৮০ বছরে পৃথিবীজুড়ে প্লাটিনামের সরবরাহের সমান।” এর মাধ্যমে বোঝা যায়, মহাকাশ খনন শিল্পে সফলতা আসলে পৃথিবীর খনিজ সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে এক নতুন দিগন্তে নিয়ে যাবে।
এই উদ্যোগের ফলে মহাকাশ গবেষণায় নতুন একটি স্তরের সূচনা হতে যাচ্ছে, যেখানে বাণিজ্যিকভাবে খনিজ আহরণের সক্ষমতা মানবজাতির জন্য এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে। এই গবেষণা এবং মিশনের মাধ্যমে পৃথিবী এবং মহাকাশের সংযোগ আরও দৃঢ় হতে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে মহাকাশ ভিত্তিক অর্থনীতি এবং উন্নতির ক্ষেত্রে একটি অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করবে।