Home বাংলাদেশ শিক্ষা ৪০ থেকে ৭০ দিনের ছুটির ফাঁদে পড়ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

৪০ থেকে ৭০ দিনের ছুটির ফাঁদে পড়ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

Posted by on in বাংলাদেশ 0
1st Image

বাংলাদেশে আসন্ন পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে টানা ৪০ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই ছুটির মধ্যে রয়েছে রমজান, দোলযাত্রা, স্বাধীনতা দিবস, জুমাতুল বিদা, শবেকদর এবং ঈদুল ফিতরের ছুটি। এ ছুটি সরকারি-বেসরকারি সকল স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য। তবে এ সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, আগামীকাল বৃহস্পতিবার সর্বশেষ ক্লাস হবে এবং এরপর থেকেই শুরু হবে টানা ৪০ দিনের ছুটি। এছাড়া আগামী ১০ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা, যার ফলে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এ কারণে কেন্দ্র থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো টানা দুই মাস ১০ দিন বন্ধ থাকবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটির নোটিস ইতোমধ্যে টাঙানো হয়েছে। সরকারি ছুটির ক্যালেন্ডার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২ মার্চ থেকে শুরু হয়ে এই ছুটি ৮ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। তবে সরকারি কলেজগুলো ৩ এপ্রিল পর্যন্ত এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ৬ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া ও সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে রমজান মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখাকে একটি যৌক্তিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে স্কুলশিক্ষার্থীরা রোজা পালন করার কারণে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় ছুটি প্রয়োজন। স্কুলশিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, "রমজানে অনেক স্কুলশিক্ষার্থী রোজা রাখে, তাদের কষ্ট এড়াতে স্কুল বন্ধ রাখাই যুক্তিযুক্ত।"

তবে, শুধুমাত্র রমজান নয়, ঈদুল ফিতরের জন্যও ছুটি বাড়ানো হয়েছে যাতে শিক্ষার্থীরা পরিবার ও আত্মীয়দের সঙ্গে আনন্দময় সময় কাটাতে পারে। এর ফলে, ধর্মীয় ও সামাজিক চাহিদার সাথে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক সুরক্ষাও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

এই দীর্ঘ ছুটি নিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বেশিরভাগ অভিভাবক ও শিক্ষক এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও, ঢাকাকেন্দ্রিক অভিভাবক ঐক্য ফোরাম এর বিপরীত মত পোষণ করেছে। তারা ২০ রমজান পর্যন্ত স্কুল খোলা রাখার দাবি জানিয়েছে এবং এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ডিজি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মো. জিয়াউল কবির দুলু এবং সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম মিয়া স্মারকলিপি হস্তান্তরকালে উল্লেখ করেন, "অনেক স্কুলে এখনও সব পাঠ্যবই সরবরাহ করা হয়নি। বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক উৎসব, শিক্ষা সফর শেষ হয়নি। এমন অবস্থায় দীর্ঘ ছুটি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত করবে।"

অভিভাবক ঐক্য ফোরাম তাদের স্মারকলিপিতে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে দীর্ঘ ছুটির সময়ও শিক্ষার্থীরা শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। তারা উল্লেখ করেছে, বর্তমানে অনেক স্কুলে পাঠ্যবই সরবরাহের ঘাটতি রয়েছে এবং শিক্ষাক্রম সম্পন্ন করতে অনলাইন ক্লাস উপকারী হতে পারে।

তবে, এই প্রস্তাব নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। অনেক শিক্ষক ও অভিভাবক মনে করেন, "অনলাইন ক্লাস গ্রামীণ এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য সমানভাবে উপকারী নাও হতে পারে, কারণ সেখানে ইন্টারনেট সংযোগ এবং ডিভাইসের অভাব রয়েছে।"


রমজান মাসে স্কুল বন্ধ থাকলেও কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেট টিউশন চালু থাকবে। অনেক অভিভাবক মনে করেন, "কোচিং-প্রাইভেট খোলা থাকলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করতে হয়। সে সময় স্কুলও খোলা থাকলে তাদের জন্য সুবিধাজনক হবে।"

অন্যদিকে, কোচিং সংশ্লিষ্টরা স্কুল খোলা রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, এতে শিক্ষার্থীদের এককেন্দ্রিক পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। তবে, শিক্ষকদের একাংশ মনে করেন, রমজানে শিক্ষার্থীদের বাড়তি চাপ না দেওয়াই উত্তম।

বাংলাদেশের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে রমজান মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা একটি সংস্কৃতিগত বাস্তবতা। তবে, দীর্ঘ ছুটির কারণে শিক্ষাক্রমের ঘাটতি, অনলাইনে ক্লাসের প্রস্তাব, এবং কোচিং সেন্টারের কার্যক্রম নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

অভিভাবক ঐক্য ফোরাম ও অন্যান্য সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের উচিত শিক্ষার মান ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা। বিশেষ করে, অনলাইনে ক্লাসের প্রস্তাবকে বাস্তবায়নযোগ্য করতে ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নত করা প্রয়োজন।

দীর্ঘ ছুটির এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক সুরক্ষা নিশ্চিত হলেও, শিক্ষা কার্যক্রমে ঘাটতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই, সরকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকদের সমন্বয়ে সুষম ও কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া আবশ্যক।

এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধাজনক করতে অনলাইন ক্লাস, পুনঃপরীক্ষার ব্যবস্থা এবং কোচিং সেন্টারের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি, ছুটির সময় শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ও সৃজনশীল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাও জরুরি।