Home বাংলাদেশ শিক্ষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডে উন্নীতকরণ

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডে উন্নীতকরণ

Posted by on in বাংলাদেশ 0
1st Image

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের (প্রশিক্ষিত ও অপ্রশিক্ষিত) দশম গ্রেডে উন্নীতকরণ এবং দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে গেজেটভুক্ত করার সরকারি নির্দেশ বহাল রেখেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। আপিল বিভাগের এই সিদ্ধান্ত দেশের প্রায় ৩০,০০০ প্রধান শিক্ষকের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যা তাদের আর্থিক ও পেশাগত মর্যাদা বাড়াবে।

প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে ঘোষণা করার প্রতিশ্রুতি প্রথম দেওয়া হয়েছিল ২০১৪ সালের ৯ মার্চ, যখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘোষণা দেন। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পরবর্তীতে প্রশিক্ষিত প্রধান শিক্ষকদের জন্য ১১তম এবং অপ্রশিক্ষিত প্রধান শিক্ষকদের জন্য ১২তম গ্রেড নির্ধারণ করে, যা শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্যের জন্ম দেয়। এই অসঙ্গতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন শিক্ষক নেতারা। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির তৎকালীন সভাপতি রিয়াজ পারভেজসহ ৪৫ জন শিক্ষক এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে আদালতে রিট দায়ের করেন। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর, ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট শিক্ষকদের পক্ষে রায় দেন। আদালত তাদের দশম গ্রেডে উন্নীত করার নির্দেশ দেয় এবং সরকারি গেজেটে তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে বলে।

হাইকোর্টের রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষ আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে, যা ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি খারিজ হয়। এরপর, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করে। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এই আবেদন খারিজ করে এবং পূর্বের রায় বহাল রাখার নির্দেশ দেয়। এই রায়ে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক, যিনি রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন। শিক্ষকদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দিন দোলন।

শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন এবং আইনি লড়াইয়ের পর এই রায় তাদের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেছে। এখন থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা (প্রশিক্ষিত ও অপ্রশিক্ষিত) দশম গ্রেডে উন্নীত হবেন এবং সরকারি গেজেটে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন এই রায়ের পর বলেন, “দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা হলেও প্রধান শিক্ষকরা ১১তম ও ১২তম গ্রেডে বেতন পেতেন, যা তাদের বঞ্চিত করেছিল। কিন্তু এই রায়ের ফলে তারা অবশেষে ন্যায্য বেতন পাবেন এবং সরকারি মর্যাদা লাভ করবেন।”

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উন্নীতকরণের এই রায় শিক্ষকদের মধ্যে স্বস্তি ও সন্তুষ্টির জন্ম দিয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে প্রশাসনিক স্তরে কত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়, সেটাই এখন মূল প্রশ্ন। শিক্ষকদের দাবি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করা হোক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রায় শিক্ষকদের কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি করবে এবং প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে এই রায় বাস্তবায়নে প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হলে আবারও আইনি জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি দ্রুত এবং কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য কাজ করতে হবে।