আমরা আজ এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে আছি, যখন জাতি এক গুরুতর মোড়ে অবস্থান করছে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে সাধারণ মানুষ যেমন ব্যথিত, তেমনি ভাবনার কারণও সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে দায়িত্বশীল অবস্থান থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দ্রুতই নির্বাহী পরিষদের বৈঠক ডেকেছে। সেই আলোচনায় উঠে এসেছে—দলীয় দ্বন্দ্ব কিংবা কাঁদা ছোড়াছুড়ি নয়, বরং জাতির অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন অর্থবহ ও বাস্তবভিত্তিক সংলাপ।
আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান আল-ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত শূরার বৈঠকে বলেন, সংলাপের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি আরও জানান, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানানো উচিত—যা ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে।
তিনি দেশের রাজনৈতিক অগ্রযাত্রা এবং গণতান্ত্রিক অনুশীলনের ঘাটতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বহু কিছু অর্জিত হলেও, জনগণের প্রকৃত অধিকার অনেক ক্ষেত্রেই অধরাই থেকে গেছে। ২০২৪ সালের ঘটনাবলি এবং তার প্রেক্ষাপটে উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিবর্তন নিয়ে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ডা. শফিক বলেন, “আমরা জনগণের আস্থা ফেরাতে দুটি রোডম্যাপ চেয়েছিলাম—একটি রাজনৈতিক সংস্কারের, আরেকটি সুষ্ঠু নির্বাচনের। কিন্তু এখনো তা সামনে আসেনি। সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া কোনো নির্বাচনে জনগণের বিশ্বাস ফিরবে না।”
তিনি আরও বলেন, আইন ও বিচার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা না থাকলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা বাড়বে। বিচারহীনতা কোনো জাতির জন্য আশীর্বাদ নয়। বিচার যেন ‘অবিচার’ না হয়ে দাঁড়ায়, সেটিই চাই।
গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তিনি বলেন, মানবিক করিডোর তৈরির উদ্যোগ জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। সংসদ ভেঙে দেওয়া অবস্থায় এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনুচিত। এটি রাজনীতি ও নিরাপত্তার ভারসাম্যের বিষয়। তাই প্রস্তাবিত করিডোর পরিকল্পনা যেন নির্বাচিত সরকারের হাতে ছাড়া হয়, সেটাই সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত।
চট্টগ্রাম বন্দরের বিষয়েও তিনি বলেন, এটি দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন। হঠাৎ করে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে, সবাইকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা উচিত।
সেনাবাহিনী সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি জাতীয় গর্বের প্রতীক। তাই এই প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি যেন কোনোভাবেই ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে সকলের নজর থাকা জরুরি। সেনাবাহিনী নিয়ে অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক জাতির জন্য ক্ষতিকর।
গাজায় মানবিক বিপর্যয়, সিরিয়ায় বিদেশি হস্তক্ষেপ এবং রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু ত্রাণই যথেষ্ট নয়—প্রত্যাবাসনই একমাত্র টেকসই সমাধান। যুদ্ধবিরতির চেয়ে যুদ্ধ বন্ধই হওয়া উচিত, এবং এই সমাধানও আসতে পারে সংলাপের মাধ্যমে।
পরিবর্তনের ৯ মাস পার হলেও জাতির সামনে এখনো বহু প্রশ্ন রয়ে গেছে। এ সময় ডা. শফিকুর রহমান বলেন, "আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি মানবিক, কল্যাণমুখী ও দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র দেখতে চাই—যেখানে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ নিরাপদে বসবাস করতে পারে। আল্লাহর বিধানই আমাদের দিকনির্দেশনা হবে—এ বিশ্বাসে আমরা কাজ করছি।”
তিনি সকল দেশপ্রেমিক নাগরিক, রাজনৈতিক দল এবং সমাজের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের প্রতি আহ্বান জানান—এই মানবিক রূপান্তরের অভিযাত্রায় সবাই যেন অংশগ্রহণ করেন।