চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মারা যেতে পারে ৪০ হাজার মানুষ
দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন
সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত কয়েক বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যে গত বছর এ রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত আর মৃত্যু দেখেছে দেশবাসী। শুধুমাত্র এক বছরেই সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১ হাজার ৭০৫ জন। আর ৬৪ জেলায় প্রায় সোয়া তিন লাখ মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অন্য দেশেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালে বিশ্বের প্রায় ২০ হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে মারা যায়। আর এই বছর কমপক্ষে ৪০ হাজার মানুষ মারা যাবে। বিপরীতে, ২০০০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু কমেছে ৩০%।
দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন বলছে, একটি স্ত্রী এডিস মশা যদি ফ্ল্যাভিভাইরাস প্যাথোজেন বহন করে এবং এ অবস্থায় যদি কাউকে কামড় দেয় তাহলে ভুক্তভোগী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন। বেশিরভাগ সংক্রমণ লক্ষণ ছাড়াই চলে যায়, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু ক্ষেত্রে ব্রেকবোন ফিভার দেখা যায়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে জয়েন্টে ব্যথা, রক্তক্ষরণ এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ডেঙ্গু পরবর্তী-প্রভাবও বেশ যন্ত্রণাদায়ক। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন মনে করে সারা বিশ্বে প্রতি বছর ১০ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত অঞ্চল লাতিন আমেরিকা। ২০০০ থেকে ২০০৫ সালে সেখানে বছরে গড়ে পাঁচ লাখ মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। কিন্তু ২০২৩ সালে অঞ্চলটিতে ৪৬ লাখ মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। এদিকে ২০২৪ সালে এরই মধ্যে সেখানে প্রায় ৬০ লাখ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্রাজিলের মানুষ।
একদিকে যেমন ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তেমনি অঞ্চল ছাপিয়ে তা ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের সর্বত্র। এডিস মশা তাপমাত্রার ছোট পরিবর্তনের জন্য সংবেদনশীল এবং বিশ্ব উষ্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের পরিসর প্রসারিত হচ্ছে। অ্যানেফিলিস মশা ম্যালেরিয়া ছড়ায়, যা এখন সারা বিশ্বেই পাওয়া যায়। কিন্তু এডিস মশা এখনো সব অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েনি। কিন্তু জলবায়ুর বর্তমান প্রবণতা অনুযায়ী, এডিস মশা দক্ষিণ ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে আরও দুইশ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
অন্যদিকে ডেঙ্গুর মোকাবিলায় দীর্ঘদিন ধরেই ভালো কাজ করছে সিঙ্গাপুর। দেশটি স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে নিয়মিত মনিটরিং করছে। তাছাড়া কোথাও পানি জমেছে কি না তার খোঁজ করা, লার্ভা সংগ্রহ এবং দায়ীদের জরিমানার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। মশার কেন্দ্রস্থলগুলোতে নিয়মিত ওষুধ ছেটানো হয়।
ডেঙ্গু জ্বরের জন্য বিশ্বকে অবশ্যই প্রস্তুতি নিতে হবে। যদিও ধনী উত্তর গোলার্ধ ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, তবে এতে বিশ্বের দরিদ্র অংশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।