যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (NSC) থেকে হঠাৎ করেই অন্তত এক ডজন কর্মকর্তা ছাঁটাই করা হয়েছে, যা প্রশাসনিক কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয় বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। বিষয়টি প্রথমে তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।
সূত্র মতে, সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিওর নেতৃত্বে এনএসসি-এর আকার ও প্রভাব মারাত্মকভাবে সংকুচিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই পরিবর্তনের অংশ হিসেবে ইউক্রেন ও কাশ্মীরসহ গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে কাজ করা অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদেরও ছাঁটাই করা হয়েছে।
এ সিদ্ধান্ত এসেছে এমন এক সময়ে, যখন এনএসসি পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে এটি একটি সিদ্ধান্তগ্রহণকারী গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা থেকে ধীরে ধীরে একটি সীমিত সহায়ক কাঠামোয় রূপ নিচ্ছে। হোয়াইট হাউজের পরিকল্পনা অনুযায়ী, NSC-এর মোট কর্মী সংখ্যা ৫০-এ নামিয়ে আনার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে—যেখানে জো বাইডেন প্রশাসনে সদস্যসংখ্যা ছিল প্রায় ৩০০।
দুটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ছাঁটাই হওয়া কর্মকর্তাদের কিছু অংশকে অন্য সরকারি বিভাগে স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে আচমকা এই রদবদলে অনেক কর্মকর্তা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছেন। এনএসসি-এর প্রধান কার্যালয় আইজেনহাওয়ার এক্সিকিউটিভ অফিস বিল্ডিংয়ে অনেকে কান্না চেপে রাখতে পারেননি।
এই রদবদলের ফলে পররাষ্ট্র দপ্তর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং গোয়েন্দা সংস্থার ওপর নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নের দায়ভার আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। নীতিগত সিদ্ধান্তে পেশাদার পরামর্শের প্রভাব কমে যাওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
কনজারভেটিভ মহল দীর্ঘদিন ধরেই এনএসসি-এর আকার ছোট করার পক্ষে ছিলেন। তাদের মতে, বিভিন্ন দপ্তরে একই কাজ বারবার হওয়ায় বাজেট ও জনবল অপচয় হচ্ছে। অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাট ও কিছু রিপাবলিকান এই ছাঁটাইয়ের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, অভিজ্ঞ ও বিশ্লেষণভিত্তিক পরামর্শের অভাব প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতিনির্ধারণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এনএসসি সাম্প্রতিক মাসগুলোতে জনবল নিয়োগেও নানা সংকটে পড়েছে। বিশেষ করে ল্যাটিন আমেরিকা বিষয়ক শীর্ষ পদটি কখনোই স্থায়ীভাবে পূরণ করা যায়নি। এর আগে বছরের শুরুতে আরও একাধিক কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন, যার পেছনে প্রেসিডেন্টের ‘বিশ্বস্ত তালিকা’ প্রস্তুতকারক হিসেবে পরিচিত লরা লুমারের ভূমিকা ছিল।
একইসাথে, সাবেক উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজের এক সাংবাদিককে গোপন তথ্য ফাঁস করে দেওয়ার ঘটনাও NSC-এর ভেতরে উদ্বেগ সৃষ্টি করে।