বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে ২৯ মিলিয়ন ডলার (২ কোটি ৯০ লাখ ডলার) অর্থায়ন করেছে, সে বিষয়টি সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যে উঠে এসেছে। তিনি একটি ক্ষুদ্র, অজ্ঞাত সংস্থার নাম উল্লেখ করেন, যেটি এই বিপুল পরিমাণ অর্থ পেয়েছে এবং সে বিষয়ে মন্তব্য করেন, “এমন একটি সংস্থাকে ২৯ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে, যার নাম আগে কেউ শোনেনি। এখানে মাত্র দুজন কর্মী কাজ করেন এবং তারা খুবই খুশি, কারণ তারা এই অর্থের মাধ্যমে দ্রুত ধনী হয়ে উঠবে।”
এই বক্তব্যের মাধ্যমে ট্রাম্প বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ এবং তাতে অর্থায়নের গতি সম্পর্কে কিছু সংশয়ও প্রকাশ করেন। বিশেষভাবে, ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে গভর্নরদের একটি ওয়ার্কিং সেশনে কথা বলার সময় বাংলাদেশের পরিস্থিতির বিষয়ে নিজের মতামত দেন। তিনি এই অর্থায়নের বিষয়টি তুলে ধরার পর, সেই সংস্থার কার্যক্রম ও অস্বাভাবিকতার প্রতি সন্দেহও প্রকাশ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতাবিষয়ক বিভাগ (ডিওজিই) ১৫ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করে যে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত ২৯ মিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন বাতিল করা হয়েছে। এই প্রকল্পটির নাম ছিল “স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ”, যার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উন্নয়ন এবং শক্তিশালী করা। তবে এই অর্থের প্রকৃত ব্যবহার ও বরাদ্দকৃত সংস্থা সম্পর্কে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে, ট্রাম্প ওই একই দিন ২৯ মিলিয়ন ডলারের বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেন, যেখানে তিনি বলেন, এমন একটি সংস্থা পেছনে রয়েছে, যার নাম আগে কেউ শোনেনি এবং সেখানে মাত্র দুজন লোক কাজ করেন। তিনি আরও বলেন, “এই সংস্থার কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে, শিগগিরই তারা একটি বড় প্রতারণার মাধ্যমে বিখ্যাত হতে চলেছে।” তার এই মন্তব্যে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নিশ্চিত যে, ট্রাম্প বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থের অপব্যবহার অথবা অস্বচ্ছতার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন এক সাবেক বাংলাদেশি কূটনীতিক প্রথম আলোকে জানান যে, ইউএসএআইডি বা যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে বিদেশী প্রকল্পে অর্থায়ন পেতে হলে, সংশ্লিষ্ট সংস্থার যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত হতে হয় এবং প্রকল্পের সাথে যুক্ত ব্যক্তির যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব থাকা বাঞ্ছনীয়। অর্থাৎ, এই ধরনের অর্থায়ন সরাসরি বাইরের কারও কাছে যাওয়ার কথা নয়। এটি আরও স্পষ্ট করে জানায় যে, বিদেশী সংস্থাগুলি প্রকল্পের অর্থ পেতে অনেক জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তবে এই ২৯ মিলিয়ন ডলার একটি অস্বাভাবিক ঘটনা।
হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত ওই সভায়, ট্রাম্প ভারত ও নেপাল সম্পর্কেও কিছু মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “আমার বন্ধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতকে ২১ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হচ্ছে, যাতে ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধি পায়। আমিও তো চাই, আমাদের দেশে ভোটার উপস্থিতি বাড়ুক।” এ ছাড়া, তিনি নেপালের জন্য ৩৯ মিলিয়ন ডলারের সাহায্য নিয়ে মন্তব্য করেন। এর মধ্যে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য নেপালকে ১৯ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন ট্রাম্প।
ভারত ও নেপাল ছাড়াও, ট্রাম্প আরও কয়েকটি দেশের নাম উল্লেখ করেছেন, যারা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহায়তা পেয়েছে। এসব দেশের মধ্যে সার্বিয়া এবং মলদোভা উল্লেখযোগ্য। সার্বিয়া ও মলদোভাসহ অন্যান্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে ট্রাম্প সেগুলোর জন্য নির্দিষ্ট অর্থায়ন উল্লেখ করেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অংশ হিসেবে দেখানো হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই বিশাল অর্থায়ন বাংলাদেশের রাজনৈতিক শক্তিশালীকরণের জন্য কেন বরাদ্দ করা হলো? এতে কী ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে এবং সেই প্রকল্পগুলো কতটা কার্যকরী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া, যে সংস্থার মাধ্যমে এই অর্থ দেওয়া হয়েছে, সে সংস্থার কার্যক্রমের স্বচ্ছতা এবং তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভূমিকা নিয়েও অনেক আলোচনা শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে বিরোধী দলগুলোর অবস্থা এবং সরকারের নানা পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে, এই ধরনের আন্তর্জাতিক অর্থায়ন বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির শক্তি বাড়ানোর জন্য এই ধরনের সাহায্য প্রয়োজনীয় হলেও, এর বাস্তবায়ন এবং রাজনৈতিক শুদ্ধতার বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।