পাসপোর্ট কী এবং কেন এটি প্রয়োজন?
পাসপোর্ট হল একটি সরকারি পরিচয়পত্র যা আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য অপরিহার্য। এটি সাধারণত একটি দেশের সরকার কর্তৃক ইস্যু করা হয় এবং এতে পাসপোর্টধারীর নাম, জন্ম তারিখ, জাতীয়তা, পাসপোর্ট নম্বর, ইস্যু এবং মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে।
পাসপোর্টের প্রধান ভূমিকা হলো বিদেশে প্রবেশ এবং বের হওয়ার অনুমতি প্রদান করা। এটি শুধু ভ্রমণের জন্য নয়, বরং বিভিন্ন আইনি ও প্রশাসনিক কাজেও ব্যবহার করা হয়, যেমন ভিসার আবেদন, বিদেশে চাকরির আবেদন, বিদেশে শিক্ষা গ্রহণের অনুমোদন ইত্যাদি।
বাংলাদেশে পাসপোর্টের ধরন
বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। প্রতিটি পাসপোর্টের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে এবং এটি ব্যবহারকারীর পেশা ও প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে প্রদান করা হয়।
১. সাধারণ পাসপোর্ট (MRP & e-Passport)
এটি সাধারণ জনগণের জন্য ইস্যু করা হয় এবং ভ্রমণের জন্য ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP) এবং ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট (e-Passport) চালু রয়েছে।
২. কূটনৈতিক পাসপোর্ট
বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কূটনৈতিক কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য এই পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়।
৩. সরকারি পাসপোর্ট (অফিশিয়াল পাসপোর্ট)
সরকারি কর্মকর্তারা অফিসিয়াল কাজে বিদেশ ভ্রমণের জন্য এই পাসপোর্ট ব্যবহার করে থাকেন।
বাংলাদেশে পাসপোর্ট তৈরির নিয়ম ও প্রক্রিয়া
বাংলাদেশে পাসপোর্ট ইস্যু করার জন্য বেশ কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হয়।
১. পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়া
বাংলাদেশে বর্তমানে অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন জমা দেওয়া যায়। আবেদন প্রক্রিয়া সহজ ও ডিজিটাল হওয়ায় এটি এখন আগের চেয়ে অনেক দ্রুত সম্পন্ন করা যায়।
অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন করার ধাপসমূহ:
- প্রথমে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট ওয়েবসাইট (ওয়েবসাইট লিংক) এ প্রবেশ করুন।
- "Apply for a New e-Passport" অপশন সিলেক্ট করুন।
- প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করুন, যেমন ব্যক্তিগত তথ্য, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য, ঠিকানা ইত্যাদি।
- আবেদন ফরম সাবমিট করার পর নির্দিষ্ট পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করুন।
- ফি পরিশোধ করে নির্দিষ্ট সময় পর পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন।
বাংলাদেশে পাসপোর্ট ফি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
পাসপোর্ট আবেদন করতে কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্র এবং ফি প্রয়োজন হয়।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট
- পূর্ববর্তী পাসপোর্ট (যদি থাকে)
- ছবি (সাধারণত অফিসে বায়োমেট্রিক নেওয়া হয়
- পাসপোর্ট ফি পরিশোধের রশিদ
পাসপোর্ট ফি:
বাংলাদেশে পাসপোর্ট ফি নির্ভর করে পাসপোর্টের ধরন এবং ইস্যুর সময়সীমার উপর।
ডেলিভারির ভিত্তিতে ৪৮ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট এর ফি নিন্মরূপ :
ডেলিভারির ধরন | ফি (টাকা) | সময়সীমা |
---|---|---|
রেগুলার ডেলিভারি | ৪০২৫ টাকা | ২১ কার্যদিবস |
এক্সপ্রেস ডেলিভারি | ৬৩২৫ টাকা | ১০ কার্যদিবস |
সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি | ৮৬২৫ টাকা | ৩ কার্যদিবস |
ডেলিভারির ভিত্তিতে ৪৮ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট এর ফি নিন্মরূপ :
ডেলিভারির ধরন | ফি (টাকা) | সময়সীমা |
---|---|---|
রেগুলার ডেলিভারি | ৫৭৫০ টাকা | ২১ কার্যদিবস |
এক্সপ্রেস ডেলিভারি | ৮০৫০ টাকা | ১০ কার্যদিবস |
সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি | ১০৩৫০ টাকা | ৩ কার্যদিবস |
ডেলিভারির ভিত্তিতে ৬৪ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট এর ফি নিন্মরূপ :
ডেলিভারির ধরন | ফি (টাকা) | সময়সীমা |
---|---|---|
রেগুলার ডেলিভারি | ৬৩২৫ টাকা | ২১ কার্যদিবস |
এক্সপ্রেস ডেলিভারি | ৮৬২৫ টাকা | ১০ কার্যদিবস |
সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি | ১২০৭৫ টাকা | ৩ কার্যদিবস |
ডেলিভারির ভিত্তিতে ৬৪ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট এর ফি নিন্মরূপ :
ডেলিভারির ধরন | ফি (টাকা) | সময়সীমা |
---|---|---|
রেগুলার ডেলিভারি | ৮০৫০ টাকা | ২১ কার্যদিবস |
এক্সপ্রেস ডেলিভারি | ১০৩৫০ টাকা | ১০ কার্যদিবস |
সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি | ১৩৮০০ টাকা | ৩ কার্যদিবস |
পাসপোর্ট হয়েছে কিনা চেক / অনলাইনে পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম
অনেক সময় পাসপোর্ট প্রসেসিং অবস্থায় থাকে বা ইস্যু হওয়ার পর স্ট্যাটাস চেক করার প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ সরকার অনলাইনে পাসপোর্ট চেক করার সুবিধা চালু করেছে।
অনলাইনে পাসপোর্ট চেক করার ধাপসমূহ:
ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।
- "Check Status" অপশন সিলেক্ট করুন।
- আপনার পাসপোর্ট রশিদের নম্বর বা জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর প্রবেশ করান।
- জন্ম তারিখ দিন।
- ক্যাপচা পূরণ করে "Submit" বাটনে ক্লিক করুন।
- পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থা স্ক্রিনে প্রদর্শিত হবে।
পাসপোর্ট সংক্রান্ত সাধারণ সমস্যাগুলো ও সমাধান
অনেক সময় পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। নিচে সাধারণ কিছু সমস্যা ও তার সমাধান দেওয়া হলো।
পাসপোর্ট নাম সংশোধন: পাসপোর্টে নাম ভুল হলে সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী নাম সংশোধন করা যাবে।
পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে: যদি পাসপোর্ট হারিয়ে যায়, তাহলে নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি (GD) করতে হবে এবং নতুন পাসপোর্টের জন্য পুনরায় আবেদন করতে হবে।
ভুল তথ্য সংশোধন: পাসপোর্টের জন্ম তারিখ বা অন্যান্য তথ্য ভুল হলে প্রমাণস্বরূপ নথি প্রদান করে সংশোধন করা যায়।
উপসংহার
বাংলাদেশে পাসপোর্ট পাওয়া আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে, বিশেষ করে অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া চালু হওয়ায় এটি আরও সুবিধাজনক হয়েছে। যেকোনো আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে বৈধ পাসপোর্ট থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই নির্ভুল তথ্য দিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় পাসপোর্ট আবেদন করা উচিত এবং প্রয়োজনে অনলাইনে স্ট্যাটাস চেক করার মাধ্যমেও আপডেট থাকা প্রয়োজন।
আপনি যদি বাংলাদেশের পাসপোর্ট সংক্রান্ত আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে চান, তাহলে পাসপোর্ট অফিসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন অথবা নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করুন।