ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রাতের সময় ডাকাতির আতঙ্ক বেড়ে চলেছে। অন্ধকারের সঙ্গে এই মহাসড়কে নেমে আসে ডাকাত দল, যারা একের পর এক হামলা চালিয়ে যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। এমনকি কিছু ডাকাত দল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও অস্ত্রের মুখে ডাকাতি করছে। গত কয়েক মাসে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে, যা মহাসড়কের যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
সরকার পরিবর্তনের পর ডাকাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বিমানবন্দর থেকে দেশে ফেরার পথে প্রবাসী, ব্যবসায়ী, গাড়িচালক এবং স্থানীয় শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছেন। তবে, অনেক ঘটনা ক্লুলেস হওয়ায় এবং প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে সাধারণ মানুষ মামলা করতে চাইছেন না। পুলিশও অনেক সময় শুধুমাত্র জিডি নিয়ে দায় শেষ করছে, যার ফলে ডাকাতির সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। কুমিল্লা অঞ্চলের হালকা যানবাহনের চালকরা জানিয়েছে, গত ছয় মাসে নারায়ণগঞ্জ থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত মহাসড়কে অন্তত ১০০ ডাকাতি এবং ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে, যার বেশির ভাগই মামলা হয়নি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলতি মাসে ১৯টি ডাকাতির মামলা রুজু হয়েছে, যেগুলোর মধ্যে বেশ কিছু মামলা ধরপাকড়ের পরিপ্রেক্ষিতে দায়ের হয়েছে। তবে, পুলিশের ওপর ভরসা কমে যাওয়ার কারণে অনেকেই আইনগত ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না। এমনকি, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ অংশে ৮ ডিসেম্বর একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও তার কোনো মামলা হয়নি। এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে উঠলেও ডাকাতি ঠেকানো সম্ভব হয়নি।
ডাকাতির পরবর্তী সময়ে যাত্রীরা সচরাচর এলাকা ছেড়ে দ্রুত চলে যায়। পুলিশের কাছে গিয়েও মামলা করার ক্ষেত্রে নানা ধরনের ঝামেলা থাকার কারণে তারা কোনো আইনগত পদক্ষেপ নেন না। এর ফলে মহাসড়কের অপরাধীদের আরো সাহসী করে তোলে এবং ডাকাতি বাড়ে। ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষত নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁ, কুমিল্লাসহ নানা এলাকায় নিয়মিত ডাকাতির ঘটনা ঘটছে।
এছাড়া, গত ৮ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এলাকায় একটি সোনার দোকানে ডাকাতি সংঘটিত হয়, যেখানে ডাকাতরা গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দোকান থেকে প্রায় ২৫ ভরি সোনা লুট করে নিয়ে যায়। এই ঘটনাও একটি বড় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ প্রকাশ্যে হামলা চালিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীকে গুলি করা হয়েছে এবং পুলিশের অভিযানে দুর্বৃত্তদের শাস্তি না হওয়ায় ঘটনার পরেও আশঙ্কা কাটেনি।
রাতের বেলা মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লে সড়কে যানজট সৃষ্টি হয় এবং তখনই ডাকাতরা হামলা চালায়। এমনকি, ঢাকায় আসা প্রবাসীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে সমস্যা হতে পারে কারণ প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস বা অন্য কোনো যানবাহন যেখানে গাড়ির থামার সময় থাকে, সেখানে তারা হামলা চালিয়ে যাত্রীদের সবকিছু লুটে নেয়। পুলিশ বলছে, ডাকাতি মাত্র দেড় থেকে দুই মিনিটের মধ্যে হয়ে যায় এবং এরপর তারা দ্রুত পালিয়ে যায়।
প্রতিদিনের এসব ঘটনায় মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন চালকরা আতঙ্কিত হয়ে উঠেছেন। তারা নিরাপত্তা দাবি করে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। কিছু ভার্চুয়াল গ্রুপে তারা ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনা জানিয়ে থাকেন, যার মাধ্যমে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে, অধিকাংশ সময় এসব ঘটনায় পুলিশের কার্যকর পদক্ষেপের অভাব এবং বিচার না হওয়ায় সমস্যা বাড়ছে।
এদিকে, হাইওয়ে পুলিশ এবং স্থানীয় পুলিশ মহাসড়কে টহল বাড়ানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত বড় কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। অতএব, ডাকাতির ভয় ও আতঙ্কের অবসান করতে হলে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যাতে মহাসড়কে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় এবং ডাকাতির ঘটনা কমানো সম্ভব হয়।