খাগড়াছড়ির পাঁচ উপজেলার ১১টি মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক টাওয়ারের সংযোগ প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে লক্ষাধিক মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে, বিশেষ করে যারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে নিজেদের দৈনন্দিন যোগাযোগ চালিয়ে থাকেন। এ ছাড়া, শুধু টাওয়ারের সংযোগ বিচ্ছিন্নই নয়, যন্ত্রাংশও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে, যা খাগড়াছড়ির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব অভিযোগের তীর আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর দিকে। যদিও সংগঠনটি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে, তবুও তাদের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি এবং নেটওয়ার্ক টাওয়ার ভাঙচুরের বিষয়টি স্থানীয়দের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল জানিয়েছেন, সেসব টাওয়ারগুলো সবই বেসরকারি টেলি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রবি কোম্পানির ছিল। বিচ্ছিন্ন হওয়া টাওয়ারগুলোর মধ্যে রয়েছে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের গিরিফুল, দীঘিনালার বাবুছড়া, বাঘাইছড়ি মুখ, বড়াদম, মানিকছড়ি উপজেলার ময়ূরখীলসহ মোট ১১টি জায়গা। এর মধ্যে কিছু এলাকায় শুধু টাওয়ারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি, বরং যন্ত্রাংশের রুমে ভাঙচুর ও লুটপাটও করা হয়েছে। এর ফলে গ্রাহকদের কাছে নেটওয়ার্কের পরিষেবা পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
তবে গত ৫ই আগস্ট সরকার পতনের পর, পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। নতুন সরকারের অধীনে হাইজিন সার্ভিসেস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান রবি কোম্পানির টাওয়ারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। কিন্তু নতুন দায়িত্বে আসার পর, হাইজিন সার্ভিসেস লিমিটেডের পক্ষ থেকে এরকম ঘটনা নিয়ে কোনও স্পষ্ট বক্তব্য আসেনি। যন্ত্রাংশের ক্ষতি এবং টাওয়ারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কারণ সম্পর্কে কেউ পরিষ্কার তথ্য দিতে রাজি হননি। স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনগুলো মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করছে এবং সে কারণে নেটওয়ার্ক টাওয়ারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হতে পারে।
এছাড়া, ২২ জানুয়ারি থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলায় একাধিক হামলা ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে, যার সঙ্গে আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। একাধিক উল্লিখিত এলাকায় বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সন্নিকটে যেখানে ব্যবসায়িক কেন্দ্র ও দোকানপাট রয়েছে, সেখানে প্রকাশ্যে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, রবি কোম্পানির খাগড়াছড়ি জেলা ম্যানেজার মো. জহিরুল ইসলাম জানান, তাদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে, টাওয়ারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এর সমাধানের জন্য তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। যদিও, কোম্পানির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট শাখায় তদন্ত চলছে, কিন্তু অনেক সময় তদন্তের ফলে কোনও সুনির্দিষ্ট ফলাফল পাওয়া যায় না।
এছাড়া, খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আরও বলেছেন যে, “এই ব্যাপারে অভিযোগ এখনও পাওয়া যায়নি, তবে আমরা এই বিষয়ে স্বপ্রণোদিতভাবে তদন্ত শুরু করেছি।” আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে, যাতে এই ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
এই পরিস্থিতি স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বেশ ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যারা যোগাযোগের জন্য পুরোপুরি মোবাইল ফোনের উপর নির্ভরশীল। আর এতকিছুর পরেও, যদি প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।