৪৩ পণ্যে ভ্যাট বৃদ্ধির প্রস্তাব, ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ

Posted by on in অর্থনীতি 0
1st Image

সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে বিস্কুট, আচার, কয়েল, টিস্যু পেপারসহ প্রায় তিন ডজন পণ্য ও সেবার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, এই পদক্ষেপের ফলে পণ্যের দাম আরও এক ধাপ বাড়তে পারে।

সরকারি পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্য

বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, ভ্যাট বাড়লেও তা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে তেমন প্রভাব ফেলবে না। তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, সরকারের রাজস্ব ঘাটতি পূরণ এবং আইএমএফের শর্ত পূরণই এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ।

এনবিআরের তথ্যমতে, আগামী অর্থবছর থেকে প্রায় সব পণ্য ও সেবার ওপর একক ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া, রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে 'মূসক ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধনী) অধ্যাদেশ-২০২৫' আগামী শনিবার জারি হতে পারে।

প্রভাবিত পণ্য ও সেবা

নতুন ভ্যাট বৃদ্ধির আওতায় আসতে পারে বিস্কুট, আচার, কয়েল, টিস্যু পেপার, সিগারেট, ফলমূল, ডিটারজেন্ট, স্যান্ডেল, রেস্তোরাঁর খাবার, ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা। এই পণ্য ও সেবার দাম বাড়লে তা সরাসরি সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব ফেলবে।

ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ

ভ্যাট বৃদ্ধির খবরে ব্যবসায়ী মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ রেস্তরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, "ভ্যাট বাড়ানো হলে ছোট ব্যবসায়ীরা টিকতে পারবে না। সরকার এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে আমরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।"

পর্যটন খাতের একজন উদ্যোক্তা বলেন, "বিমানের টিকিটের দাম বাড়লে পর্যটন খাত আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনিতেই এই খাত সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।"

অর্থনীতিবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি

বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির এমন সময়ে ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আরও চাপ সৃষ্টি করবে। পলিসি এক্সচেঞ্জের নির্বাহী পরিচালক ড. মাশরুর রিয়াজ বলেন, "সুচিন্তিত গবেষণা ছাড়া ভ্যাট হার বাড়ানো হলে তা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।"

সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠীর ওপর ব্যয় চাপ বাড়বে। যেহেতু অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার ওপর এই ভ্যাট প্রযোজ্য হবে, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে।

সম্ভাব্য ফলাফল

সরকার যদি ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তাহলে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে স্থবিরতা আসতে পারে। পাশাপাশি, ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাবে, যা অর্থনীতির সামগ্রিক গতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।